শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সনাতন ধর্ম ও বাল্যবিবাহ

★আজকে আপনাদেরকে জানাবো সনাতন ধর্মের
পবিত্র বেদ বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সবাই কি
শিক্ষা দিচ্ছে?

★অনেক ব্যক্তিই আছে সমাজে যারা কেবল
কয়েকজন ব্যক্তির উদাহরণ টেনে বলে অমুক
মানুষ কম বয়সি মেয়েকে বিবাহ করেছেন।
তারা ভদ্র লোকের মতো আপনার সামনে
খাড়া করে একটি যুক্তি তুলে দেই তাহলো--

যদি ধর্মে না থাকতো তবে ঐ মানুষটি
(ছেলে বা মেয়ে) অল্প বয়সি মেয়ে কিংবা
ছেলে বিবাহ করলো কেনো?

★এখানে যদি আমি অভদ্রের মতো একটা
যুক্তি খাড়া করে দিই তাহলে তো ভদ্র
লোককে টর্চ লাইট দিয়ে দিনের বেলায়
খুজতে হবে।

★আমার অভদ্র যুক্তিটি হলো--

যদি ধর্মে না থাকতো তাহলে ঐ মানুষটি
(ছেলে বা মেয়ে) কেনো যুবক বা যুবতি অবস্থায়
বিবাহ করল??

★এবার আসি পবিত্র বেদ এ বাল্যবিবাহ
স্বীকৃত দিচ্ছে কি না।
.
★পবিত্র ঋগ্বেদ--৩/৮/৪

যুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান্
ভবতি জায়মান্।
তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়স্তি স্বাধ্যোত মনসা
দেবয়ন্তঃ।।
.
★বঙ্গানুবাদ -- যাহারা ব্রহ্মচর্য্য ধারণ এবং
বিদ্যা ও শিক্ষা গ্রহণ করেন না, অথবা
বাল্যবস্থায় বিবাহ করেন, সেই স্ত্রী পুরুষ
নষ্ট এবং ভ্রষ্ট হইয়া বিদ্ধানদিগের নিকট
হইতে প্রতিষ্টা লাভ করিতে পারেনা।
.
★উক্ত মন্ত্রটিতে সকল ব্যাক্তিকে ব্রহ্মচর্য্য
পালন পূর্বক বিদ্যা ও শিক্ষা গ্রহণ করতে
বলা হচ্ছে। এবং বাল্যবস্থায় যে বিবাহ
করবে সে কখনো প্রতিষ্টা লাভ করতে
পারবেনা।
.
.
★পবিত্র ঋগ্বেদ ৩/৫৫/১৬

আ ধেনবো ধুনয়ন্তামশিশ্বীঃ শবদুর্ঘাঃ
শশয়া অপ্রদুগ্ধাঃ।
নব্যানব্যা যুবতয়ো ভবন্তীর্মহদ্দেবার্নামসুরত্বমেকম্ঃ।।

★বঙ্গানুবাদ -- কখনো ভ্রমক্রমে এবং
বাল্যবস্থায় মনেও পুরুষের ধ্যান করিবেন না,
কারণ উক্তরুপ ইহকাল ও পরকালের সুখসাধন
হইয়া থাকে, বাল্যবিবাহ হইতে পুরুষ অপেক্ষা
নারীর নাশ বেশিই হইয়া থাকে।

★উক্ত মন্ত্র একজন নারীকে বলা হচ্ছে
বাল্যবস্থায় কখনো পুরুষকে কামনা
করিবেনা। এবং বাল্য বিবাহের ফলে পুরুষ
অপেক্ষা নারীর বেশি ক্ষতি হয়।
আমরা সকলেই এই বিষয়ে অবগত যে অল্প
বয়সে কোন মেয়েকে বিবাহ দিলেও সন্তান
জন্মদানের সময় বেশিরভাগ মেয়েই মৃত্যুমুখে
পতিত হয়। উক্ত মন্ত্রে এই দিকটিই
নির্দেশিত হয়েছে।
.
.
★ ঋগ্বেদ ১/১৭৯/১

পূর্ব্বীরহং শরদঃ শশ্রামাণাঃ দোষাবস্তো
রুষসো জরয়ন্তীঃ।
মিনাতি শ্রিয়ং জরিমা তনূনামপ্যূ নু
পত্নীর্বৃষনো জগমূঃ।।

বঙ্গানুবাদ ---আমি নিশ্চই করিতেছি যে
ব্রহ্মচর্য্য হইতে বিদ্যা,শিক্ষা,শরীর ও
আত্মীয় বল এবং যুবাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া
বিবাহ করিব। ইহার বিরুদ্ধানুষ্টান বেদ
বিরুদ্ধ হওয়াতে কখনো সুখদায়ক হইতে
পারেনা।

উক্ত মন্ত্রে একজন ব্যক্তি প্রার্থনা করছে
যে সে যুবক অবস্থায় বিবাহ করিব, এবং সে
আরো বলেছে সে বিদ্যাগ্রহণ এবং ব্রহ্মচর্য্য
পালন করে যুবাবস্থায় বিবাহ করবে, এবং সে
ব্যক্তি আরো বলতেছে যে বাল্যবিবাহ
বেদবিরুদ্ধ অনুষ্ঠান তা কখনো সুখদায়ক হতে
পারেনা।

★তাহলে বোঝা গেলো পবিত্র বেদ
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে।
.
.
Writer and Editor Kanchan Das

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আমাদের শাস্ত্রে "সনাতন ধর্ম" এর উল্লেখ আছে

ইদানিং প্রায় সব ধর্মীয় লোকদের নিকট থেকে আমাদের হেয় হতে হয় একটা বিশেষ কারণে তাহলো আমাদের ধর্মের নাম নিয়ে।
অন্য ধর্মাবলম্বীরা প্রায় দাবি তুলে আপনাদের ধর্মের নাম কি???
.
হিন্দু ধর্ম নাকি সনাতন ধর্ম??
.
আর এতেই আমাদের মাঝেই বিবেদ সৃষ্টি হয়, কেউ বলি হিন্দু ধর্ম আর কেউ বলি সনাতন ধর্ম আবার অনেককেই বলতে শুনি বৈষ্ণব ধর্ম কিংবা শৈব ধর্ম।
.
আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আড়ালে থেকে এর মজা নিতে চায়।
.
অনেকের হয়তো মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের ধর্মের নাম কি??
.
এই ধর্মের কথা কি আমাদের কোন শাস্ত্রেই নেই??
.
আমি বলি কি আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম, যা চিরন্তন।
আর এই ধর্মের কথা পবিত্র বেদ, মনু-সংহিতা আর পবিত্র শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতায় উল্লেখ আছে।
.
প্রথমেই পবিত্র শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতার কথাটায় বলি।
.
আমরা সকলেই জানি শ্রীগীতায় ১৮টি অধ্যায় আছে।
আর ১১শ তম অধ্যায়ের ১৮ নম্বর শ্লোকেই সনাতন নামক ধর্মে উল্লেখ আছে।
শ্লোকটি নিম্নরূপ ----
.

★ত্বম্ অক্ষরম্ পরমম্ বেদিত্যবম্
ত্বম অস্য বিশ্বস্য পরম্ নিধানম ।
.
★ত্বম্ অব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্ত
সনাতনঃ ত্বম পুরুষঃ মতঃ মে ।।
.
অর্থ-তুমি পরম ব্রহ্ম এবং এক মাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম
আশ্রয় ও সনাতন ধর্মের রক্ষক, তুমিই সনাতন এই আমার
অভিমত।
.
উল্লেখ্য যে এই মন্ত্রে শ্রী অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সনাতন ধর্মের রক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
.
অর্থাৎ বুঝা গেল সনাতন ধর্মের কথা শ্রীমদ্ভাগবদ গীতায় উল্লেখ আছে।
.
এর চলুন সনাতন ধর্ম সম্পর্কে মনুসংহিতায় কি বলা আছে?
.
আমরা জানি মনুসংহিতার ১২টি অধ্যায় রয়েছে।
এর মধ্যে ৪র্থ অধ্যায়ের ১৩৮ নম্বর মন্ত্রে সনাতন ধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মন্ত্রটি নিম্নরুপ---
.
★সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়ান্নব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।
.
★প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ।।
.
অনুবাদ--: অপরের হিতকর প্রিয় সত্য কথা বলিবে, অপ্রিয় সত্য কথা কখনো বলিবেনা যাহা লোকের মর্মভেদ করে, অপরকে প্রসন্ন করার সহিতে মিথ্যা বলিবে না, ইহাই বেদবিহিত সনাতন ধর্ম।
.
অর্থাৎ এখানে বেদ নির্দেশিত একমাত্র ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মের উল্লেখ আছে।
.
উক্ত মন্ত্র থেকে একটা প্রশ্ন হতে পারে তাহলো---
.
অপ্রিয় সত্য কথা বলতে কি বুঝানো হয়েছে??
.
উত্তর:---- অপ্রিয় সত্য কথা বলতে বুঝানো হয়েছে কিছু সত্য কথা, কিন্ত তা শুনতে অপ্রিয়, যেমন---- কানাকে কানা বলে উপহাস করা, বধিরকে বধির বলে উপহাস করা, সন্তানহীন কে সন্তানহীন বলে উপহাস করা, বোবাকে বোবা বলে উপহাস করা।
একথা গুলো সত্য, কিন্তু শুনতে অপ্রিয় লাগে, এই বেদবিহিত সনাতন ধর্মে এরকম অপ্রিয় সত্য কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
.
কিন্তু সনাতন ধর্মে কিরকম সত্য বলতে হবে???
.
এর উত্তর মনুসংহিতার ৪/১৩৯ এ উল্লেখ আছে।
মন্ত্রটি নিম্নরূপ ---
.
★ভদ্রং ভদ্রমিতি ব্রুয়াদ্ ভদ্রমিত্যেব বা বদেৎ।
.
★শুষ্কবৈরং বিবাদঞ্চ ন কূর্ষ্যাৎ কেনচিৎ সহ।।
.
অনুবাদ--: সর্বদা ভদ্র অর্থাৎ সকলের হিতকর বাক্য কহিবে, বিনাপরাধে কাহারো সঙ্গে বিবাদ বা বিরোধ করিবে না। কাহার হিতকর হইলে সে অন্যথা মনে করিলেও,  তাহা না বলিয়া ক্ষান্ত হইবেনা।
.
অর্থাৎ সত্য কথা বলা উচিত। যেটা সত্য কথা অপরের উপকার হবে, ভন্ডদের মুখোশ খুলে দিবে সেই সত্যই বলা উচিত।
.
এবার আসুন পবিত্র বেদে সনাতন ধর্ম কথার কেমন উল্লেখ আছে??
.
আমরা সকলেই জানি পবিত্র বেদের চারটি ভাগ, যথাঃ- ঋক্,সাম,যজুঃ এবং অথর্ববেদ।
.
পবিত্র অথর্ববেদের ১৮তম কান্ডের, ৩য় সূক্তের, ১ম মন্ত্রেই সনাতন ধর্মের উল্লেখ আছে।
মন্ত্রটি নিম্নরূপ ---
.
★ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
.
★ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
.
পদার্থ:---- মর্ত্য-হে মনুষ্য, ইয়ং নারী-এই স্ত্রী, পতিলোকম-পতিলোককে অর্থাত্ বৈবাহিক অবস্থাকে, বৃণনা-কামনা করিয়া, প্রেতম-মৃত পতির, অনু-পরে, উপ ত্বা-তোমার নিকট, নিপদ্যতে-আসিতেছে, পুরাণম-সনাতন, ধর্ম্মম-ধর্মকে, পালয়ন্তী-পালন করিয়া, তস্য-তাহার জন্য, ইহ-এই লোকে,
প্রজাম্-সন্তানকে, দ্রবিণং-এবং ধনকে, ধেহি-ধারন করাও।
.
★বঙ্গানুবাদঃ---হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।
.
উক্ত মন্ত্রে একজন বিধবা নারীকে পুনর্বার বিবাহ করে সনাতন ধর্ম পালন করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

.

★শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১৬/১৮ তে বলা হয়েছে---

→ত্বত্তঃ সনাতনো ধর্মো রক্ষ্যতে তনুভিস্তব।

→ধর্মস্য পরমো গুহ্যো নির্বিকারো ভবান্মতঃ।। .

★বঙ্গানুবাদ- ভগবান বিষ্ণুকে উদ্দেশ্যে করে সনকাদি মুনিগণের উক্তি " সনাতন ধর্মের উৎপত্তিও তোমার থেকেই হয়েছে, তুমিই অবতাররুপ গ্রহণ করে বার বার সনাতন ধর্ম রক্ষা করছ। নির্বিকার স্বরুপ তুমিই ধর্মের গূহ্য রহস্য- শাস্ত্রতো তাই বলে"

.

★এখানে সনকাদি মুনি শ্রীবিষ্ণুর উদ্দ্যেশ্যে বলতেছে ভগবানই সনাতন ধর্মের উৎস।
.
তাই এখন সকল প্রমাণ দিয়ে বলতে পারি আমি গর্বিত সনাতন ধর্মাবলম্বী।
আপনিও কি বলতে পারবেন "আমি গর্বিত সনাতন ধর্মাবলম্বী "?
.
.
.
Writer and Editor  Kanchan Das

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...