প্রথমেই নিরুক্তের একটি মন্ত্র দেখ নিই---
ঋষয়ো মন্ত্রদ্রষ্টারঃ।
ঋষির্দর্শনাৎ স্তোমান্
দদর্শেত্যৌপমন্যয়বঃ।
(নিরুক্ত সংহিতা ২।১১)
=> এখানে স্পষ্ট ঋষিদের মন্ত্রদ্রষ্টা বলা হয়েছে , স্রষ্টা
নয় ! দ্রষ্টা অর্থে যিনি দৃষ্ট করেছেন । এখানে দৃষ্ট
অর্থে উপলব্ধি করা ! তাহলে স্রষ্টা কে ?
-> অবশ্যই ঈশ্বর ! কেননা বেদ স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় বেদ
ঈশ্বর হতে উৎপন্ন হয়েছে।
অনেকে বলেন , ঈশ্বর ঋষিদের মধ্যে জ্ঞান প্রদান
করেছিলেন । সেই জ্ঞান দিয়ে ঋষিগণ নিজের ভাষায়
নিজের মত মন্ত্র রচনা করে নিয়েছেন । জ্ঞান যেহেতু
ঈশ্বরের , তাই বেদও ঈশ্বরের সৃষ্টি বলা হয়।
এখানে বেদ* অর্থে যদি বেদের মন্ত্রসকল না হয়ে শুধু
বেদজ্ঞান* হয় , তাহলে অর্থ দাড়ায় - "বেদজ্ঞান ঈশ্বর
সৃষ্টি করেছেন !" তবে আমি প্রশ্ন করি , বেদজ্ঞান* সদা
নিত্য হলে তার সৃষ্টি কিভাবে সম্ভব ? নিত্য জিনিসের সৃষ্টি
ধ্বংস থাকতে পারে না।
অতএব , প্রতিপন্ন হয় যে , বেদ ঈশ্বরের সৃষ্টি* একথা
বললে এটাই বুঝতে হবে - বেদ জ্ঞান সমৃদ্ধ মন্ত্রসকল ই
ঈশ্বরের সৃষ্টি !
★ঈশ্বর তো নিরাকার(যদিও বা ঈশ্বরের সাকার রুপ আছে) ! তবে তার হতে শব্দরূপ বেদ কি
প্রকারে উৎপন্ন হতে পারে ?
=> ভাবিয়া দেখো তো , এমন প্রশ্ন করলে ঈশ্বরের
ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে কিনা ? পরমেশ্বর
সর্বশক্তিমান এটা ভুলিলে চলবে না । নিরাকার নির্গুন(সগুনও হতে পারেন)
ঈশ্বর যদি
জগৎ সৃষ্টি করতে পারেন , তবে বেদের বেলায় এ শঙ্কা
কেন ?
আমরা মানসিক কোন বিষয় বিচার করিবার সময় মনে মনে বাক্যাদি
সাধন ব্যতিরেকে প্রশ্নোত্তরাদিও শব্দোচ্চরনে সমর্থ
হই । পরমেশ্বরের বিষয়েও এরূপ জ্ঞাত হওয়া কর্তব্য !
এইরূপেই ঈশ্বর অন্তরে কারনরূপ* শব্দে বেদ প্রদান
করেছেন । বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত বুঝানোর চেষ্টা করি
-
মহামুনি পাণিণি , পতজ্ঞলি ,জৈমিনি সকলেই স্বীকার করেন শব্দ
নিত্য । আমরা একটি শব্দ শুনিলে , সেই উচ্চারিত শব্দ
জ্ঞানমধ্যে স্থির থাকে । পুণরায় একই শব্দ উচ্চারন করলে
তা জ্ঞানমধ্যে স্থিত শব্দের অর্থপ্রকাশ করা হয় মাত্র যে
ইহা সেই !! তাই উচ্চারণ ক্রিয়ার সাথে সাথে শব্দের শব্দের
সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যায় না ! অতএব শব্দের নিত্যরূপ সর্বদা নিত্য
থাকে , কার্যরূপ ধ্বংস হয় মাত্র ! উচ্চারণ ক্রিয়া না করলেও শব্দ
বর্তমান থাকে !
এবং এই নিত্য শব্দে বেদ মন্ত্র সকল ও নিত্য থাকে !
পূর্বে বলেছি মনে মনে প্রশ্নোত্তরাদি
শব্দোচ্চরনের কথা ।-
আমরা জানি , কারণ ব্যতীত কার্য হয় না । এবং কার্য কারণ
ব্যতীত হয় না ! সৃষ্ট মন্ত্ররূপ* কার্যের পিছনে সেই সৃষ্ট
মন্ত্ররূপ* কার্যের কারণ থাকা আবশ্যক ! অতএব,
কারণশব্দরূপে* বেদ মন্ত্র না থাকিলে কার্যশব্দরুপ* বেদ
কোথা দিয়ে আসবে ? সমাধিস্ত ধ্যনস্থ ব্যক্তি সরাসরি
ব্রহ্মে লিন হন ! তখন তার অন্তঃকরনে কারণশব্দরূপে* যে
মন্ত্রোচ্চারিত হয় তা সরাসরি ঈশ্বরেরই সৃষ্টি ! এবং তার
কার্যরূপ* হল উচ্চারিত মন্ত্র ! -তাছাড়া , এই কারণশব্দ
অন্তঃকরণে উচ্চারিত না হইলে জ্ঞানই বা কিকরে উপলব্ধের
অনুকূলে আসবে !
জ্ঞাণেন্দ্রিয় দ্বারা শ্রুত হইয়া যাহা গৃহীত হয় এবং বাগেন্দ্রিয়
দ্বারা উচ্চারণে যাহা প্রকাশিত হইয়া থাকে ও যাহার নিবাসস্থল
আকাশ - তাহাকেই শব্দ বলে।
> বেদ বিষয় ক্ষেত্রে যাহাই কারণ* তাহাই কার্য* হওয়া
আবশ্যক ।কেননা , ঈশ্বর যতটুকু জ্ঞান প্রদান করেন,
ঋষিদের শুধুমাত্র ততটুকুই বলার সামর্থ্য থাকতে পারে, তদ্
অতিরিক্ত বলার সামর্থ্য থাকতে পারে না ।এবার, কারণরূপ*
মন্ত্রসকল ঈশ্বর সৃষ্ট হলে , কার্যরূপ মন্ত্রসকল ও
ঈশ্বরের সৃষ্টি বলতে হবে ! ঋষি ওখানে প্রকাশের মাধ্যম
মাত্র !
* বেদ নিত্য - তা সর্বকালের জন্যই একই ! কিকরে?
=> কারন (ঋ১০/১৯০/৩) প্রতিকল্পে সৃষ্টি একই ! একই সৃষ্টির
জন্য একই জ্ঞান প্রয়োজন। জল তেষ্টা পেলে কারো
নিকট " আমাকে একটু জল দাও" বলিব ! পুনরায় জল তেস্টা
পেলেও সেই " আমাকে একটু জল দাও" বলিব । " আমাকে
একটু দুধ দাও" বলিব না ! অতএব , সৃষ্টি যদি সকল কল্পে একই
হয় ,বেদ মন্ত্রসকল ও একই হওয়া আবশ্যক।
সুতরাং , বেদ জ্ঞান সহ সকল মন্ত্রই ঈশ্বর প্রদত্ত । এজন্য
একমাত্র বেদকেই অপৌরষেয় বলা হয় ! ঈশ্বরের বানী
বলেই তা অভ্রান্তরূপে মানা হয়।
বেদ থেকে ঈশ্বরের পরিচয় জানতে চাই?
উত্তরমুছুন