★সিঁন্দুর
সিঁন্দুর হল একটি কমলা-লালাবর্ণের মিশ্র পদার্থ যা বিবাহিত হিন্দু নারীরা তাদের সিঁথিতে পড়ে থাকে। একজন বিবাহিত হিন্দু নারীর দুই প্রতিক হল হাতের শাঁখা ও সিঁথির সিঁন্দুর, তাই একজন হিন্দু নারীর কাছে সিঁন্দুর গুরুত্ব অন্য জিনিসের তুলনাই অনেক বেশি।
বর্তমানে ব্যাবহৃত সিঁন্দুর মূলত ২ ধরণের হয়, একটি প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর ও আরেকটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুর টি Bixa sp.
গাছের ফল কে গুঁড়ো করে তার সাথে কিছু উদ্ভিদজাত পদার্থ ও হলুদ, এল্যাম(Alum) লাইম(Calcium oxide) মিশিয়ে তৈরী করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে তৈরী সিঁন্দুরে সিলিকন পাউডার ও বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থের সাথে সালফারের আকরিক Mercury Sulfide এর পরিশুদ্ধ পাউডার ও সীসাজাত যৌগ মিশিয়ে তৈরী করা হয়। পারদ খুব তীব্র বিষাক্ত পদার্থ হওয়ার জন্য বর্তমানে এর ব্যাবহার মাইক্রোগ্রাম পরিমানই নেওয়া হয়। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সিঁন্দুরই এখন বহুল ব্যাবহৃত।
.
★সিঁন্দুরের ঐতিহ্য★
.
★বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁথিতে সিঁন্দুর পড়া আনুমানিক ৫,০০০ বছর প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। প্রাচীন রামায়ণে মাতা সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদী সিঁথিতে সিঁন্দুর ব্যাবহারের স্পস্ট প্রমাণ আছে। রামায়ণে শ্রীরাম যখন মাতা সীতা কে বিবাহ করেন তখন তিনি মাতা সীতার সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, একই প্রমাণ আছে হরিবংশ পুরাণে যখন শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীদেবী কে বিবাহ করেন তখন তিনিও রুক্মিনীদেবী সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করেছিলেন, এই পরম্পরাই এখনও অবদি হিন্দু বিবাহতে চলে আসছে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রী কে সিঁথিতে সিঁন্দুর দান করিয়ে স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করে। এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক এটা স্বিকার করে থাকেন প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেও নারীরা সিঁন্দুর ব্যাবহার করতো।
সিঁন্দুরের গুরুত্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাখা আছে “ললিতা সহস্রনামে”। এটা ব্রহ্মান্ডপুরাণের অংশ বিশেষ, দেবী ললিতা যিনি মা দূর্গা বা মা শক্তির অপর নাম তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ললিতাদেবীর সিঁথির সিঁন্দুর কে শ্রীলক্ষীর প্রতিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ্যাৎ একজন বিবাহিত নারীকে এই সিঁন্দুরই তাকে শ্রীলক্ষীর স্বরূপ হিসাবে সমাজের সামনে তুলে ধরে। হিন্দু সংস্কারে নারীকে লক্ষী হিসাবে গণ্য হয় এবং বিবাহিত নারী কে শ্রী+লক্ষী=শ্রীলক্ষী হিসাবে গণ্য করা হয় কারণ একজন বিবাহিত নারী সংসারের “শ্রী” এর কারক, “শ্রী” বিনা সেই সংসার পূর্ণতা পাই না।
জগৎগুরু আদি শঙ্করাচার্য তার “সৌন্দর্যলহরী” গ্রন্থে সিঁন্দুর কে মা শক্তির স্বরূপ অর্থ্যাৎ মা দূর্গার প্রতিক অর্থ্যাৎ যিনি দূর্গতি হারিণী তার প্রতিক ও মঙ্গলরুপী সূর্য হিসাবে ব্যাখা দিয়েছেন। সিঁথিতে সিঁন্দুর ও কপালের সিঁন্দুরের টীপ শ্রী চক্রের স্বরূপ।
.
★সিঁন্দুরের সামাজিক গুরুত্ব★
.
★বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁন্দুর হিন্দু সমাজে ২টি প্রধান গুরুত্বের নির্দেশ দেয়।
.
(১) সিঁথিতে সিঁন্দুর নির্দেশ করে সেই নারীটি বিবাহিত, সে একজনের স্ত্রী। ফলে সমাজের সমস্থ নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে তাকে খুব সহজে আলাদ ভাবে চেনা যাবে এবং অন্য একজন সংস্কারী পুরুষ তার প্রতি পরস্ত্রীর মর্যাদা ও মনোভাব দেখাই।
.
(২) সিঁন্দুরের কমলা-লালবর্ণ নির্দেশ করে সেই নারীটি একটি সংসারে মঙ্গলকারক ও পতিব্রতার স্বরূপ। সংসারের কল্যাণ সাধনে সেই নারী সর্বদা তৎপর।
অর্থ্যাৎ সিঁন্দুর একটি গুণাবলী নির্দেশক প্রতিক, যা একজন বিবাহিত হিন্দু নারীর মাহাত্ম্য কে হিন্দু সমাজের সামনে তুলে ধরে। এখন অনেকই নারী আছে যারা সিঁন্দুর পড়ে না, সম্ভবত তাদের বোধহয় এইসব মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী গুণগুলো থাকে না বা পালনে অক্ষম বা অনাগ্রহী। কারণ লক্ষী ও অলক্ষীর মধ্যে এই একটা পার্থক্য এই সিঁন্দুর।
সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭
বিবাহিত হিন্দু নারী এবং সিদুর
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??
✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...
-
★সনাতন ধর্ম হাজার বছরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা একটি ধর্ম। মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি কাজের ব্যাপক পর্যালোচনার পরই ঋষিগণ একটি করে নিয়ম দিয়ে দিয়েছে...
-
অনলাইনে এখন অত্যন্ত গুরুত্ত্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিমা নাই, কিন্তুু সনাতনীরা প্রতিমা বানিয়ে পূজা করে কেনো? তাদের জন্য নিম্নের...
-
বর্তমানে অনলাইনে কিছু জ্ঞানপাপীর আগমন হয়েছে তারা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপপ্রচার করে। তাদের অন্যতম নিকৃষ্ট একটি লেখা যেখানে তারা শু...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন