সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

বেদে অশ্লীলতা প্রসঙ্গে অপপ্রচারের জবাব

আজকাল অনলাইনে কিছু তমোনিষ্ঠ পাপবুদ্ধিদের আধিক্য
বৃদ্ধি পেয়েছে। বেদের মহত্ততার হানি ঘটানোর জন্য
এদের প্রচেষ্টা। যদিও বেদের মতো উচ্চ আধ্যাত্মিক
জ্ঞান এসব পাপ বুদ্ধিদের মস্তিষ্কে নেই। যার ফলে এরা
নিজেদের অশ্লিলপূর্ণ জীবনের নোংরা জ্ঞান দিয়ে
বেদ বিচার করতে আরম্ভ করেছে।যার দরুন এরা শুধু
নিজেদেরই নয় নিজেদের জন্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ
করেছে। এসব কুলাঙ্গার বেদ মন্ত্রে কিছু অশ্লিলতা দাবী
করেছে।
আসুন সেগুলোর খন্ডন এবং পর্যবেক্ষন করা যাক-
.
=>> দাবি - ০১
ভগবান বাপ আর কণ্যার যৌন সঙ্গমের ফলে মনুষ্য তৈরী
করেছিলো।
(ঋগবেদঃ ১০।৬১।৫-৭)
.
দাবির সত্যতাঃ
এদের যে জন্মগত বড় একটা ক্রুটি আছে সেটা একদম
স্পষ্ট। সেজন্যই কিছু কুলাঙ্গারদের ভাষ্য যেমন
রামগোবিন্দ, রমেশ, মহিধর এদের ভাষ্য দিয়ে বেদকে
অশ্লিলতা দাবী করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। বেদ মন্ত্রার্থ
বুঝতে হলে প্রাচীন গ্রন্থ সমূহ যেমনঃ নিঘন্টু, নিরুক্ত,
পাণিনীর ব্যকরনের মতো শাস্ত্র এবং ব্যাখ্যার জন্য ব্রাহ্মণ
গ্রন্থের প্রয়োজন হয়। তবেই মন্ত্রের যথার্থ ভাবার্থ
খুজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু রমেশ বা রামগোবিন্দের ভাষ্য
এসব গ্রন্থের ধারে কাছ দিয়েও যায় না। আর সেই কারনেই
এদের ভাষ্য অশ্লিলতাই পরিপূর্ণ।
আসুন এবার মন্ত্রগুলোর যথার্থ অনুবাদ দেখে নেওয়া
যাক। তাহলেই স্পষ্ট হবে কি বলা আছে এই
মন্ত্রগুলোতে।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৫
পদার্থঃ (যস্য বীর কর্মম প্রথিষ্ট) যেই গৃহস্থের
পূত্রকর্ম - পূত্রোৎপাদনার্থ কর্ম বীর্যসেচন প্রথিত -পুষ্ট
হয় (ইষ্ণত- অনুষ্ঠিতম) পূত্ররূপ দ্বারা প্রাপ্ত সফলীভূত (পুনঃ
তত অবৃহতি) পূনরায় তাহাকে এই উত্তমভাবে উৎসাহিত করি
পূত্রোৎপাদন দ্বারা (নু নর্য অপৌহত) নরের অবশ্যই হিতকর
হয়ে সর্ব কার্যভার কে ত্যাগ করবে। (যত) যা দ্বারা (কণায়াঃ
দুহিতু- অনুভূতম্ - আস্) সন্তান দোহন যোগ্য- উৎপাদন
যোগ্য কান্তার অনুকুলতার মধ্যে ধারন করে (অর্ণবা) নিজ
মধ্যে সমর্থ স্বাশ্রয়বান হয়ে যায়।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৬
পদার্থঃ (যত্ যুবাত্যাং কর্ত্বম-অভবত্) যখন যুবতী ভার্যা মধ্যে
পুত্রোৎপাদন দ্বারা কর্তব্য পূর্ণ হয়ে যায় (পিতরি কামং কৃণ্বান -
অভীকে) জীবিত পিতা - তার আশ্রয় পুত্রের পুত্র উৎপাদন
কে কামনা হয়ে যাবার পর তার সম্মুখ (বিয়ন্তৌ মনানক- রেত
জহতুঃ) বিশিষ্ট দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে পতি পত্নি অল্প সন্তান কে
ত্যাগ করে- উৎপন্ন করে (সুকৃতস্য যোনৌ সানৌ নিষ্কত্তম্)
পূর্ণকর্মের অর্থাৎ পিতৃঋণের প্রতিকার হয়ে যাবার পর
গৃহাশ্রমের মধ্যে বিশেষ সেচন করার যোগ্য জগতের
মধ্যে নিষেক করা কর্তব্য।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৭
পদার্থঃ (ক্ষ্ময়া সঞ্জগ্মানঃ) সন্তানের ভূমিরূপ পত্নিদ্বারা সঙ্গত
হয়ে,তথা ( রেত নিষিঞ্চন) গর্ভাধান রীতি দ্বারা বীর্য
সিঞ্চন করে (পিতা স্বাং দুহিতরম-অধিষ্কন্) পিতা নিজ কণ্যা কে
প্রাপ্ত করে -উৎপন্ন করে - পুত্র প্রাপ্ত করে না। তখন
(সবাধ্য -দেবাঃ ব্রহ্ম জনয়ন) দুরদর্শী বিদ্বান জ্ঞান কে -
গৃহস্থ জ্ঞান কে নিয়ম কে প্রকট করে ঘোষিত করে
(বাস্তোষ্পার্তি ব্রতপাং নির অতক্ষন) সেই কণ্যাকে গৃহপতি
ঘরের স্বামীরূপ পিতৃকর্মের রক্ষিকা নির্ধারিত করে।
[ অনুবাদঃ স্বামী ব্রহ্মমুনিঃ পরিব্রাজক বিদ্যামার্তন্ড]
.
উক্ত তিনটি মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে, পুরুষ যুবতী ভার্যা
মধ্যে পূত্রোৎপাদনের জন্য বীর্য নিষেক অবশ্য
করবে। এজন্য গৃহস্থ আশ্রম সবচেয়ে পূণ্য স্থান এবং ইহা
গৃহাশ্রমের পরম্পরা। যদি পুরুষ বীর্য সিঞ্চনে করার পর পূত্র
না প্রাপ্ত করে কেবল কণ্যা কে প্রাপ্ত করে। তবে সে
কণ্যা পিতৃকর্মের রক্ষিতা তথা পিতার সম্পত্তির স্বামী হবে।
ইহাই বেদের পরম্পরা এবং বৈদিক সিদ্ধান্তের মান্যতা।
কত নির্মল বেদের এই সিদ্ধান্ত। অথচ এসব পাপবুদ্ধিরা এসব
মন্ত্রে পিতা কণ্যার অজাচার খুজে পেয়েছে।
=>> দাবী - ০২
"হে পুরুষ! তোমার পুরুষাঙ্গ বড়ো আর দীর্ঘ না হলে তুমি
বাপ হতে পারবে না"
(অথর্ববেদ ২০।১২৬।১৭)
.
দাবীর সত্যতাঃ
সর্বপ্রথম মন্ত্রের যথার্থ অনুবাদ পদার্থসহ দেখে নেওয়া
যাক -
.
ন সেশে যস্য রোমশং নিষেদুষো বিজৃম্ভতে।
সদীশে যস্য রম্বতেন্তরা সকথ্যা কপৃদ বিশ্বস্মাদিন্দ্র।।
(অথর্বববেদ ১০।১২৬।১৭)
.
পদার্থঃ (সঃ) সেই মনুষ্য (ন ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় না ( যস্য
নিষেদুষঃ) যে বসে থাকে [অলস] (রোমশম) কেশযুক্ত
মস্তকে (বিজুম্ভতে) হাই তোলে (সঃ ইত) সেই পুরুষ
(ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় (যস্য) যার (কপৃত) শির পালনকারী
কপাল (সকথ্যা অন্তরা) দুই জঙ্ঘার মাঝে [ চিন্তনে]
(রম্বতে) ঝুকে থাকে (ইন্দ্র) ইন্দ্র (বিশ্বস্মাত্) সবার
থেকে (উত্তর) উত্তম।
[ অনুবাদঃ ক্ষেমকরনদাস ত্রিবেদী]
.
উপরিউক্ত মন্ত্রে না আছে পুরুষাঙ্গের কথা না আছে সেটা
বড় বা দীর্ঘ করার কথা।
উক্ত মন্ত্রে "ঈশ" শব্দটি এসেছে যার অর্থ ঐশ্বর্য। এবং
একজন ব্যক্তির ঐশ্বর্য তখনই বৃদ্ধি পাবে যখন সে কর্মঠ
এবং কর্ম চিন্তনে রত থাকবে। অলস ভাবে বসে থাকলে তার
কখনও ঐশ্বর্য প্রাপ্তি ঘটবে না। ইহাই মূলত উক্ত মন্ত্রের
মূল ভাবার্থ।
আর ঈশ্বর্য্য প্রাপ্তির জন্য পুরুষাঙ্গ দীর্ঘ বা বড় হওয়ার
সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটা কাম চাহিদার সাথে
সম্পর্কযুক্ত। যা ওই পাপবুদ্ধির মস্তিস্কে প্রবেশ
করেছে।
.
=>> দাবী - ০৩
অগ্নি নাকি কুমারীদের lover।
Yama, indeed, is what is born, Yama, what shall be
born; he [Agni] is the maidens’ lover, the matrons’ lord.
(Rig Veda 1.66.4)
.
দাবীর সত্যতাঃ
এসব কুলাঙ্গার দের মস্তিষ্কে এরকম জ্ঞান থাকবে এটাই
স্বাভাবিক। আসুন মন্ত্রটির সত্যার্থ দেখে নেওয়া যাক-
.
"হে মনুষ্য! তোমরা যে সেনাপতি নিয়মকারী প্রকাশ
সবকিছুর নিয়মকর্তা জন্মাদি কারণযুক্ত কণ্যাবত্ বর্তমান রাত্রীর
আয়ুর হননকর্তা সূর্যের সমান উৎপন্ন হয়ে প্রজাদের
পালনকর্তা প্রেরিত উত্তম শিক্ষা কে প্রাপ্ত হয়ে বীর
পুরুষের বিজয়কারী সেনার সমান শত্রুদের উপর অস্ত্র
শস্ত্র চালনকারী দীপ্তির প্রতীতিকারী বিজলীর সমান
অপরিপক্ব বিজ্ঞাযুক্ত জনকে ধারন করি "
[ অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
.
এই মন্ত্রে উপমালঙ্কারের প্রয়োগ হয়েছে। মন্ত্রটির
ভাবার্থ এই যে, মনুষ্য বিদ্যা দ্বারা উত্তম শিক্ষা দ্বারা সিদ্ধ
হয়ে শত্রুর উপর বিজয় প্রাপ্ত করবে। যেমন ধনুর্বেদ
সমন্ধ্যে জ্ঞাত বিদ্বান লোক শত্রুদের উপর অস্ত্র শস্ত্র
ছুড়ে তাদের ছেদন করে। এভাবে সেনাপতি সব দুঃখকে
নাশ করবে।
.
অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান হওয়ার দরুন এতে কোন
অশ্লিলতা নেই। তাই এসব অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন।

সংগ্রহ করা---: ব্যাক টু দ্যা বেদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...