বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

★বৃক্ষরোপণ ও নির্বিচারে বৃক্ষনিধন সম্পর্কে সনাতন ধর্মের মতামত কি?

★অামরা খুব সরল দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বুঝবাে যে সনাতন ধর্মের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে অরণ্য। বৈদিক জ্ঞান আরণ্যকের জন্ম এই অরণ্য থেকেই। ঋষিদের নিভৃত সাধনার জায়গাগুলোর মধ্যে অরণ্য অন্যতম। শুধু তাই নয় হিন্দুদের আচারের ভিতরে রয়েছে এধরনের বৈশিষ্ট্য বটবৃক্ষ, ফুল, লতা-পাতা সব নিয়েই হিন্দু তার পূজার আয়োজন করে থাকে। সঙ্গত কারণেই হিন্দু ঋষিগণ বৃক্ষরোপণের ওপর যেমন জোর দিয়েছেন তেমনি বৃক্ষনিধন করতে শুধু নিষেধই করেননি, বৃক্ষনিধনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করেছেন।
.
★বৃক্ষরোপণে হিন্দুধর্মের নির্দেশ:-
_____________________________
.
১) উদ্ভিদাদি রোপণ ও পরিচর্যা করলে ভূমিদান ও গোদানের সমতুল্য পুণ্য অর্জিত হয়।
(বরাহ পুরাণ, ১৭২/৩৫)
.
২) যে ব্যক্তি একটি অশ্বত্থ, একটি নিম, একটি বটবৃক্ষ, দশটি পুষ্পবিরুৎ, দাড়িম্ব, লেবু গাছ, পাচটি আম্র চারা রোপণ করে তাদের যত্নের সাথে বৃদ্ধি করে তাকে কখনই নরকে যেতে হয় না।
(বরাহ পুরাণ, ১৭২/৩৬)
.
৩) যদি কোন দরিদ্র ব্যক্তি একটিমাত্র গাছও রোপণ করেন তবে তিনি ব্রহ্মসদনে যাবার অধিকার অর্জন করেন এবং তার তৃতীয় পুরুষ পর্যন্ত সেই ফল ভোগ করে। (ব্রহ্মনারদীয় পুরাণ, ১৩/৫২)
.
.
→বৃক্ষনিধন সম্পর্কে সনাতন ধর্মের মত :
____________________________________
.
১) যদি কেউ স্বীয় রন্ধনের উদ্দেশ্যে জ্বালানির জন্য সবুজ কাচাগাছ ভূপাতিত করে তবে তাকে চরম পতিত বলে গণ্য করা হবে।
(মনুসংহিতাঃ-  ১১/৬৬)
.
২) কোন বৃক্ষের বিস্তারিত শাখা বা যে সকল বৃক্ষ প্রয়োজনীয় ও উপকারী তার শাখা, কাণ্ড, মূল ছেদন করলে অপরাধের মাত্রানুযায়ী তার জরিমানা কুড়ি,চল্লিশ বা আশি কার্ষাপণ ( ষোলপণ বা এক কাহন )। কেউ পবিত্র স্মৃতি সৌধ, শ্মাশানভূমি, উপাসনাপ্রাঙ্গণ, পবিত্রস্থানের সীমানা নির্দেশকারী বৃক্ষ বা তার শাখা, কাণ্ড বা মূল ছেদন বা বিদীর্ণ করে তার জরিমানের হার উপর্যুক্ত জরিমানার দ্বিগুণ হবে।
(যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতাঃ- ২/২৩০)
.
৩) খনি, শিল্পকারখানা, বাঁধ ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যন্ত্রচালিত উপায়ে বড়ো বড়ো বৃক্ষের উৎসাদন করবে তাদের একঘরে করা হবে।
(যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতাঃ- ২/২৩১)
.
.
★এমনকি পরিবেশ রক্ষায় নগর পরিষ্কারের কথা মহর্ষি মনু সোজা ভাষায় বলে গেছেন-
নগর বা গ্রামের আবাসিক এলাকা থেকে অনেকদূরে মলমূত্র, দেহ প্রক্ষালনের জল, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, স্নানাগারের বর্জ্য জল অপসারিত করতে হবে।
(মনুসংহিতাঃ- ৪/১৫১)
.
.
Writer & Editor Kanchan Das

শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭

শ্রীগীতায় উল্লেখিত "স্বধর্ম" মানে কি??

প্রসঙ্গ:- পবিত্র গীতাই স্বধর্ম বলতে কি বুঝানো হয়েছে???
.
আজকাল দেখা যাচ্ছে কিছু ব্যক্তি শ্রীগীতার ৩/৩৫ নিয়ে একটু বেশিই চুলকাচ্ছে।
.
★উক্ত শ্লোকটি নিম্নরুপ---
→শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুনঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্টিতাৎ।
→স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্মো ভয়াবহঃ।।
.
★বঙ্গানুবাদঃ- " স্বধর্মের অনুষ্টান দোষযুক্ত হইলেও উত্তমরুপে অনুষ্টিত পরধর্ম থেকে উৎকৃষ্ট। স্বধর্ম সাধনে যদি মুত্যুও হয় তাও মঙ্গলজনক, কিন্তু অন্যের ধর্মের অনুষ্টান করা বিপজ্জনক।"
.
→কিছু ব্যক্তি এই বলে প্রচার করে বেড়ায় যে #সনাতন ধর্মে শাস্ত্র নির্দেশ দিয়েছে সনাতন ধর্ম খারাপ হলেও সেটা পালন করা উচিত"।
.
★উক্ত বক্তবটি বিধর্মীরা করে থাকে।
তারা উক্ত শ্লোকে স্বধর্ম বলতে বুঝেছে বর্তমানে প্রচলিত সনাতন ধর্ম,ইসলাম,বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি কিংবা জৈন ধর্ম।
.
★কিন্তু এটা পুরোপুরি ভূল ধারণা। কেননা ঐখানে স্বধর্ম বলতে সনাতন ধর্মের চতুর্বর্ণের নিজ নিজ কর্মের কথা বলা হয়েছে। যেটাকে বিধর্মীরা প্রচলিত ধর্ম বলে মিথ্যাচার করতেছে।
.
উক্ত শ্লোকের ব্য্যখ্যা দিতে গিয়ে ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ বলেছেন----
→পরধর্ম পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণভাবে শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হয়ে স্বধর্ম আচরণ করাই মানুষের কর্তব্য। জড়া প্রকৃতির গুন অনুসারে শাস্ত্র নির্দেশিত অাচরণগুলি মানুষের দেহমনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সদ্গুরু যে আদেশ দেন সেটাই পরমার্থিক কর্তব্য। এই কর্তব্য সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পরমেশ্বরের অপ্রাকৃত সেবা করে থাকি। কিন্তু পরমার্থিক হোক বা জাগতিক যাই হােক না কেনো অন্যের ধর্মের অনুকরণ অপেক্ষা মৃত্যুকাল পর্যন্ত স্বধর্মে নিষ্টাবান থাকা একান্ত কর্তব্য।  যেমন-- সত্ত্বগুনের দ্বারা প্রভাবিত ব্রাহ্মণ অহিংসা পরায়ণ, কিন্তু রজোগুনের প্রভাবে ক্ষত্রিয় প্রয়োজন হলে হিংসার অাশ্রয় নিতে পারেন, স্বধর্ম আচরণ করে ক্ষত্রিয়কে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তবে তাও ভালো। কিন্তু ব্রাহ্মণকে অনুকরণ করে অহিংসার অাচরণ করা উচিত নয়।
.
অপরদিকে শ্রীগীতার ১৮/৪৭ এ এর সুন্দর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে---
→যে মানুষ শূদ্রের কাজকর্মের দিকে আকৃষ্ট হয়, তবে সে কৃত্রিমভাবে নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে জাহির করতে পারবেনা, যদি সে ব্রাহ্মমণ পরিবারে জন্ম হলেও নয়।  এভাবেই স্বভাব অনুসারে কাজকর্ম করা উচিত, কোন কাজই ঘৃণ্য নয় যদি সেটা ভগবানের সেবার জন্য অনুষ্টিত হয়। ব্রাহ্মণের বৃত্তিমূলক কর্ম অবশ্য স্বাত্ত্বিক।  যদি কেউ সত্ত্বগুণ সম্পন্ন না হন তবে ব্রাহ্মনের কর্মকে অনুসরণ করা উচিত নয়। ক্ষত্রিয় বা শাসককে কতো রকমের ভয়ানক কাজ করতে হয়, তাকে হিংসার আশ্রয় নিয়ে শত্রুকে হত্যা করতে হয়, কুটনীতির খাতিরে মিথ্যাও বলতে হয় , এই ধরনের হিংসা চলনা রাজনীতিরর মধ্যেই থাকে। তাি বলে ক্ষত্রিয়ের স্বধর্ম ত্যাগ করে সে ব্রাহ্মনের ব্রাহ্মনের স্বধর্ম অনুকরণ করতে পারেনা। পরমেশ্বরের প্রীতির জন্যই কর্ম করা উচিত, যেমনটা অর্জুন করেছে। ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে লাভ করতে হলে ব্যবসায়ীকে কতো মিথ্যা বলতে হয়,  যদি সে মিথ্যা না বলে তবে সে ব্যবসায়ে লাভ করতে পারবেনা । ব্যবসায়ী কখনও বলে "ও বাবু, আপনার জন্য আমি কোন লাভ করছিনা, কিন্তু সকলেরই জানা উচিত যে লাভ না করে ব্যবসায়ী বাঁচতে পারেনা। সুতরাং ব্যাপারী বললো যে সে লাভ করছেনা, সেটাকে নিছক কথা বলেই ধরে নিতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত স্বরুপ এখানে বলা যায় যে, প্রত্যেকের উচিত তার স্বাভাবিক গুন অনুসারে নিয়োজিত থাকা।
.
.
Writer and Editor Kanchan Das

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...