রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না?
______________________________________
✅উত্তর---- প্রশ্নটি শুনে হয়তো অনেকে হাসবেন, অাসলে এসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা অাপনাকে খোঁচা দিতে কিন্তু দুইবার ভাববেনা, তাই এসব বিষয়ে জানা অামার অবশ্য কর্তব্য। 🙏🏿
প্রথমত অামাদের জানতে হবে যে কোন জাতীয় স্থানে শৌচকার্য করতে নেই। এই সম্পর্কিত নির্দেশ নিম্নরুপ---
.
👉🏻মনুস্মৃতি - ৪/৪৫
→নান্নমদ্যাদেকবাসা ন নগ্নঃ স্নানমাচরেৎ।
→ন মূত্রং পতি কুর্ব্বীত ন ভস্মনি ন গোব্রজে।।
.
*বঙ্গানুবাদ*
--- এক বস্ত্র পরিধান করিয়া ভোজন করিবেনা। উলঙ্গ হইয়া স্নান করিবেনা, পথিমধ্যে বা ভস্মে বা গোষ্টে (গো-চারণ ভূমিতে) প্রস্রাবাদি পরিত্যাগ করিবেনা।
.
.
👉🏻মনুস্মৃতি - ৪/৪৬
→ন ফালকৃষ্টে ন জলে ন চিত্যাং ন পর্ব্বতে।
→ন জীর্ণদেবতায়নে ন বল্মাকে কদাচন।
.
*বঙ্গানুবাদ*
---- ফাল দ্বারা বিদারিত ভূমিতে, জলেতে, চিতাতে, পর্ব্বতে, ভগ্নদেবগৃহ এবং বল্মীক স্থানে কখনো কোনমতেই মল ত্যাগ করিবেনা।
.
.
👉🏻মনুস্মৃতি - ৪/৪৭
→ন সসত্ত্বেষু গর্ত্তেষু ন গচ্ছান্নাপি চ স্থিতঃ।
→ ন নদীতীরমাসাদ্য ন চ পর্ব্বত মস্তকে।
.
*বঙ্গানুবাদ*
---- সর্পাদির গর্তে বা গমন করিতে করিতে বা দন্ডায়মান থাকিয়া বা নদীতীরে বা পর্ব্বতের শিখরদেশে মলমূত্র পরিত্যাগ করিবেনা। অত্যন্ত অার্ত্ত ব্যক্তি কখন কখন শৃঙ্গ ব্যতিরিক্ত পর্ব্বত প্রদেশে মলাদি ত্যাগ করিতে পারে।
.
→এবার দেখে নিতে হবে শৌচকার্য করার পর কীভাবে শুদ্ধ হইবে---
.
👉🏻মনুস্মৃতি- ৫/১৩৬
একা লিঙ্গে গুহ্যে তিস্রন্তথৈকত্র করে দশ।
→উভয়ো সপ্ত দাতব্যা মৃদঃ শুদ্ধিমভীপ্সতা।।
.
*বঙ্গানুবাদ*
----- বিষ্টামূত্র ত্যাগ করিয়া গোপানাঙ্গে একবার, অপানে (গুহ্যে) তিনবার, বামকরে দশবার ও উভয়হস্তে সাতবার মৃত্তিকা ও জল প্রদান করিবে, যদি একবার প্রক্ষালনেই গন্ধ যায় তথাপিও উক্ত সংখ্যা পূর্ণ করিবে।
.
এরপর অন্য একটি শ্লোকে বলা হয়েছে---
👉🏻মনুস্মৃতি - ৫/১৩৮
→কৃত্বা মূত্রং পুরীষং বা ঋান্যচান্ত উপস্পৃশেৎ।
→বেদমধ্যেষ্যমানশ্চ অন্নমশ্নংশ্চ সর্ব্বদা।।
.
*বঙ্গানুবাদ*
----- বিষ্টামূত্র ত্যাগ করিয়া বিধিমত শুদ্ধ হইবে। এবং আচমন করিয়া ইন্দ্রিয়াচ্ছিদ্
র সকল স্পর্শ করিবে, বেদাধ্যয়ণ করিতে ইচ্ছা হইলে দ্বিতীয় অধ্যায়ে (মনুসংহিতা ২য় অধ্যায়) যে আচমন করিবার বিধান আছে। সে ব্রতের অঙ্গ জানিবে এবং অন্ন ভোজন করিয়া এই প্রকার আচমন করিতে হইবে।
.
Writer & Editor Kanchan Das

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সনাতন ধর্ম ও যুদ্ধনীতি

👉🏻 যুদ্ধ বলতে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষগুলোরমধ্যে সুসংগঠিত এবং কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র সংঘর্ষকে বোঝায়। চারিত্রিক দিক দিয়ে এটি প্রচণ্ডসহিংস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। যুদ্ধকে সবসময় রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে একটি বাস্তব, প্রায়োগিক ও বিস্তৃত সশস্ত্র সংঘর্ষ হিসেবে দেখা হয়।  কিন্তু যুদ্ধ অনেক সময় অনেক সমস্যার ও সমাধান করে দেয় বা প্রকৃত মানুষদের তাদের অধিকার ও পাইয়ে দেয়।  যেমন :- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।  
অামাদের বৈদিক ধর্মের ইতিহাস দেখলে দেখতে পাই যে তখন কার রাজা-রাজদের বিস্তৃত যুদ্ধের কাহিনী, আছে দেবাসুর সংগ্রামের কথাও। 
যুদ্ধ শুধু ধ্বংসের কারণ না, যুদ্ধ নতুন করে শুরু করার ও একটি মাধ্যম। যেমনটা আমরা মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বর্ণনা থেকে পাই।
সনাতন ধর্মের শাস্ত্রাদিতে যুদ্ধনীতি সম্পর্কিত বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে ,  এখানে সেটার কিঞ্চিৎ মাত্র অালোচনা করছি। 
প্রথমত যুদ্ধ নীতি সম্পর্কিত সনাতন ধর্মের অালোকে কিছু প্রশ্ন করা যাক---
১) যুদ্ধ করাটা কি বাধ্যতামূলক?
২) যুদ্ধ না করে কি সন্ধি করা যায় না?
৩) যুদ্ধ কিরুপ শাসকের বিরুদ্ধে করা উচিত?
৪) যুদ্ধে যারা অংশ নেবে তাদের নিরাপত্তা কিরুপ হওয়া উচিত?
৫) যুদ্ধে যারা নিহত হবে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ কে করবে?
৬) যুদ্ধে যে সমস্ত ধন সম্পত্তি লাভ হবে সেগুলোর কি হবে?
৭) যুদ্ধে অংশ নেয়া শত্রুপক্ষের সব সৈন্যদের হত্যা করাটা কি বাধ্যতামূলক?
৮) যুদ্ধে পরাজিত রাজ্যের শাসন ক্ষমতা কার হাতে থাকবে?
৯) যুদ্ধে পরাজিত রাজ্যের প্রজাদের সাথে কিরুপ ব্যবহার করবে?
১০) যুদ্ধে পরাজিত রাজ্যের ধর্ম ব্যবস্থা কি একই থাকবে নাকি নতুন ধর্ম প্রথা চালু করবে? 
👉🏻👉🏻 এসব সম্পর্কে কি বলে সনাতন ধর্ম ❓❓❓
একজন আদর্শ রাজার  জন্য যুদ্ধ করাটা  বাধ্যতামূলক নয়, কেননা যুদ্ধ সবসময় ক্ষতির দিকটার পাল্লা ভারী থাকে , তবে যদি কেউ রাজাকে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করে তবে অবশ্যই ক্ষাত্র ধর্ম পালনের জন্য যুদ্ধ করতে হবে--
-সমােত্তমাধমৈরাজা ত্বাহুতঃ পালয় প্রজাঃ। 
-ন নিৰ্বৰ্ত্তেত সংগ্রামাৎ ক্ষাত্রং ধর্মমনুস্মরন্।। 
(মনু- ৭/৮৮)
---
অনুবাদ
----"এতদ্বারা বিদ্যোন্নতি হওয়াতে রাজ্যের অশেষ শ্রীবৃদ্ধি হইয়া থাকে। প্রজাপালক রাজাকে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট, নিকৃষ্ট অথবা ততুল্য কেহ কখনও সংগ্রামে আহ্বান করিলে তিনি ক্ষাত্র ধর্ম স্মরণ করিয়া যুদ্ধ যাত্রায় নিবৃত্ত হইবেন না। অর্থাৎ তিনি এইরূপ কৌশল সহকারে তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবেন, যেন নিশ্চিত রূপে নিজের বিজয় লাভ হয়।"
.
👉🏻যুদ্ধের জন্য কয়েকটা দিক জানাটা জরুরী,  যেমন--- রাজা যুদ্ধ করার জন্য সকল সরঞ্জাম আছে যেটা দিয়ে জয়লাভ করা সম্ভব? নাকি যুদ্ধে গেলে নিজের রাজ্যের হানি হবে? এক্ষেত্রে কি সন্ধি করা হবে?
.
👉🏻এর উত্তরে বলা যায় যে---
---য়দাবগচ্ছেদায়ত্যামাধিক্যং ধ্রুবমাত্মনঃ।
-তদাত্বে চাল্পিকাং পীডাং তদা সন্ধিং সমায়েৎ।। 
(মনু- ৭/১৬৯)
অনুবাদ
---যখন জানা যাইবে যে, অমুক সময়ে যুদ্ধ হইলে কিছু কষ্টে পড়িবে, কিন্তু তাহার পরে যুদ্ধ করিলে আপন বুদ্ধি ও বিজয় লাভ অবশ্য হইবে, তখন শত্রুর সহিত সন্ধি করিয়া উচিত সময় পর্যন্ত ধৈৰ্য্যাবলম্বন করিবেন ||
.
-য়দা প্রহৃষ্টা মন্যেত সর্বাস্তু প্রকৃতীৰ্ভশম্। 
-অত্যুচ্ছিতং তথাত্মানং তদা কুবীত বিগ্রহম।।
(মনু- ৭/১৭০)
অনুবাদ
--- যখন নিজের সমস্ত প্রজা অথবা সেনা অত্যন্ত প্রসন্ন, উন্নতিশীল এবং উৎকৃষ্ট বলিয়া মনে হইবে এবং নিজেকেও সেইরূপ মনে করিবেন, তখনই শত্রুর সহিত যুদ্ধ করিবেন।"
.
উপরিউক্ত বিষয় থেকে জানা যাচ্ছে যে যুদ্ধ করবেন যদি অাপনার সামর্থ্য থাকতে যুদ্ধে জয় লাভ করার, নচেৎ যুদ্ধ না করে সন্ধি করুন। 🤝
.
👉🏻 সৈন্যসামন্তদের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে শাস্ত্রের অভিমত হলো---
-স্যন্দনাশ্বৈঃ সমেয়ুধ্যেদপে নৌদ্বিপৈস্তথা। 
-বৃক্ষগুল্মবৃতে চাপৈরসিচৰ্মায়ুধৈঃ স্থলে।। 
-প্রহর্ষয়েদ্বলং ব্যুহ্য তাশ্চ সম্যক্ পরীক্ষয়েৎ। 
-চেষ্টাশ্চৈববিজানীয়াদরী মােথয়তামপি৷৷ 
(মনু- ৭/১৯৩-১৯৪)
অনুবাদ
--সমতলভূমিতে যুদ্ধ করিতে হইলে রথ, অশ্ব এবং পদাতিক লইয়া, সমুদ্রে যুদ্ধ করিতে হইলে নৌকা দ্বারা, অল্প অল্প জলে যুদ্ধ করিতে হইলে হস্তী দ্বারা, বৃক্ষোপরি ও ঝােপের মধ্যে যুদ্ধ করিতে হইলে ধনুর্বাণ দ্বারা এবং বালুকাময় স্থানে যুদ্ধ করিতে হইলে ঢাল ও তরবারির দ্বারা যুদ্ধ করিবেন ও করাইবেন। ১৯৩
-যুদ্ধকালে যােদ্ধাগণকে উৎসাহিত ও আনন্দিত করিবেন। যুদ্ধ স্থগিত হইলে শৌর্য্য ও উৎসাহবৰ্ধক বক্তৃতা, ভােজ্য,পানীয়, অস্ত্রশস্ত্রের সহায়তা এবং ঔষধাদি দ্বারা সকলের চিত্ত প্রসন্ন রাখিবেন। ব্যুহ ব্যতীত যুদ্ধ করিবেন না ও করাইবেন না। যুদ্ধনিরত সৈন্যদের কাৰ্য্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিবেন। তাহারা যথার্থ যুদ্ধ করিতেছে,—না কপটতা করিতেছে, তাহা লক্ষ্য করিবেন ॥
.
👉🏻যুদ্ধে সৈন্যসামন্ত নিহত হোক বা না হোক রাজার কর্তব্য হলো প্রজাদের সন্তানের মতো দেখা। তাই রাজ্যের অসমর্থ ও অনাথদের পালন করা রাজার ধর্ম---
-অলব্ধং চৈব লিপ্সেত লব্ধং রক্ষেৎ প্রয়ত্নতঃ। 
-রক্ষিতং বর্ধয়েচ্চৈব বৃদ্ধং পাত্রে নিঃক্ষিপেৎ ॥
(মনু- ৭/৯৯)
অনুবাদ
-রাজা এবং রাজসভা অলব্ধ ধন পাইবার ইচ্ছা করিবেন, লব্ধ ধন যত্ন সহকারে রক্ষা করিবেন, রক্ষিত ধনের বৃদ্ধি করিবেন এবং বর্ধিত ধন বেদবিদ্যা, বিদ্যার্থী, বেদোপদেশক, অসমর্থ ও অনাথদিগের প্রতিপালনের জন্য ব্যয় করিবেন |
.
যুদ্ধে প্রাপ্ত ধন সম্পত্তি অবশ্যই বিজিত রাজ্য লাভ করবে, এরুপ শাস্ত্রের নির্দেশ--
--রথাশ্বং হস্তিনং ছত্রং ধনং ধান্যং পশূন্ স্ক্রিয়। 
--সর্বদ্রব্যাণি কুপ্যং চ য়াে য়জ্জয়তি তস্য তৎ৷।
(মনু- ৭/৯৬)
★অনুবাদ★
-- "যুদ্ধে যে রথ, অশ্ব, ছত্র, ধন, ধান্য, গবাদি পশু, নারী এবং অন্য সকল প্রকার দ্রব্য, ঘৃত, তৈলের কলস প্রভৃতি যাহা যাহা জয় করিবেন, তিনি তাহা প্রাপ্ত হইবেন।
.
👉🏻যুদ্ধে গেলেই হত্যা করতে হব এরুপ নির্দয়তা শাস্ত্র দেয়নি, যুদ্ধে কাদেরকে হত্যা করা যাবেনা সেটার একটি বিবরণ নিম্নরূপ ---
-নচ হন্যাৎ স্থলারূটংন ক্লীবংন কৃতাঞ্জলি। 
-নমুক্তকেশংনাসীনংন তবাশ্মীতি বাদিন ৷৷ 
-ন সুপ্তং ন বিসন্নাহংননগ্নংন নিরায়ুধ। 
-নায়ুধ্যমানং পশ্যন্তংন পরেণ সমাগত৷৷  
-নায়ুধব্যসনং প্রাপ্তংনাত্তং নাতিপরিক্ষত। 
-ন ভীতংন পরাবৃত্তং সতাং ধর্মমনুস্মর।। 
(মনু- ৭/৯১-৯৩)
অনুবাদ
-যাহারা যুদ্ধকালে ইতস্ততঃ দাঁড়াইয়া থাকে, যাহারা নপুসংক, কৃতাঞ্জলি, উন্মুক্তকেশ ও উপবিষ্ট; যাহারা বলে আমি তােমার শরণাগত।" ৯১
-যাহারা নিদ্রিত, মুচ্ছিত, নগ্ন, অস্ত্র-শস্ত্রহীন, যুদ্ধদর্শক, শত্রুর সঙ্গী। ৯২
-যাহারা অস্ত্র-শস্ত্রাঘাতে পীড়িত, দুঃখগ্রস্ত(মৃত শোকে কাতর), অত্যন্ত আহত, ভীত এবং পলায়নপর, এতাদৃশ যােদ্ধৃগণ সৎপুরুষদের ধর্ম স্মরণ করিয়া তাহাদিগকে কখনও বধ করিবেন না। ৯৩
.
যুদ্ধে সাধারণত দেখা যায় যে কোনো দেশ বিজয় করলে উক্ত দেশে বিজিত দেশের শাসনকর্তা দেশ পরিচালনা করে। কিন্তু মহর্ষি মনুর মতে পরাজিত রাজ্যে গুনবান ধার্মিক থাকলে তাকেই রাজ্য পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া যেতেই পারে,  এই সম্পর্কে বলা অাছে যে---
-প্রমাণানি চকুৰীত তেষাং ধর্মান্যথােদিতা। 
-রত্নেশ্চ পূজয়েদেনং প্রধানপুরুষেঃ সহ।।
(মনু- ৭/২০৩)
অনুবাদ
---বিজয় লাভের পর শত্রুর সহিত প্রমাণ অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা পত্রাদি লিখাইয়া লইবেন, এবং উচিত সময়ে মনে হইলে তাহারই বংশের কোন ধার্মিক পুরুষকে এই শর্তে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করিবেন—“আপনাকে আমার আজ্ঞা অর্থাৎ ধর্মানুমােদিত রাজনীতি অনুসারে কাৰ্য্য করিয়া ন্যায় পথে প্রজা পালন করিতে হইবে। এইরূপ উপদেশ প্রদান করিয়া তাহার সন্নিকটে এমন লােক রাখিবেন, যাহাতে পুনরায় উপদ্রব না হয়। প্রধান পুরুষদের সহিত মিলিত হইয়া শত্রুকে রত্নাদি উত্তম সামগ্রী প্রদান পূর্বক সম্মানিত করিবেন। এমন কাৰ্য্য করিবেন না, যাহাতে তাহার যােগক্ষেমও সিদ্ধ না হয়। তাহাকে কারারুদ্ধ করিয়া রাখা হইলেও তাহার প্রতি যথাযােগ্য সম্মান প্রদর্শন করিবেন, যেন সে মনস্তাপ বিস্মৃত হইয়া আনন্দে থাকিবে পারে।
.
যুদ্ধে জয়ের পর 
বিজিত রাজা পররাজ্যের পালনকৃত ধর্মসংস্কৃতি পরিবর্তন করবেনা ইহাই সনাতন শাস্ত্রের বিধান ---
-জিত্বা সম্পািজয়েদেবান ব্ৰাহ্মণাংশ্চৈব ধামিকান। 
-প্রদদ্যাৎ পরিহারাংশচ খ্যাপিয়েদভয়ানি চ৷।
(মনু- ৭/২০১)
অনুবাদ
 -রাজা পররাষ্ট্র জয় করিলে পর, শক্ররাজ্যে সংস্থাপিত যে সকল দেবালয়, প্রসিদ্ধ দেবতা এক তক্তদেশবাসী ধাৰ্ষিক যে সকল ব্রাহ্মণ, ইহাদিগকে বিজিত দ্রব্যের একাংশ হইতে ভূমি ও মুখরি গ্রব্য দান এবং সন্মান দ্বারা পূজা করিবেন, তত্ত্বত্য সকলকে অভয়দান করিবেন(যাতে তারা ভীত ভাবে জীবনযাপন না করে)।
.
উপরের একটি পয়েন্ট এর উত্তর পুরোপুরি করা হয়নি, সেটা হলো বিজিত দ্রব্যের কি হবে সেটার শাস্ত্রীয় প্রমাণ কোথায়?
সেটার শাস্ত্রীয় প্রমাণ নিম্নরুপ---
-আদানমপ্রিয়করংদানঞ্চ প্রিয়কারক। 
-অভীপ্সিতানামর্থানাং কালে য়ুক্তং প্রশস্যতে৷।
(মনু- ৭/২০৪)
অনুবাদ
-যেহেতু সংসারে অন্যের সম্পত্তি গ্রহণ করা অপ্রীতিকর এবং অপরকে দান করা প্রীতিকর, এইজন্য বিশেষ করিয়া সময়ােচিত কর্ম করা এবং পরাজিত শত্রুকে তাহার মনােবাঞ্ছিত সামগ্রী প্রদান করা অতি উত্তম। কখনও শত্রুকে বিদ্রুপ করিয়া উত্যক্ত করিবেন না এবং "তােমাকে জয় করিয়াছি"এরূপ কথা বলিবেন না। কিন্তু তাহাকে সম্মান সূচক বাক্য বলিয়া তাহার সহিত সদ্ব্যবহার করিবেন।"
উক্ত শ্লোক অনুসারে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে অপরের দ্রব্য গ্রহণ করা প্রীতিকর নয় সুতরাং এটা দান করায় শ্রেয়।
.
অতএব পরিশেষে বলা যায় যে সনাতন ধর্মের যুদ্ধনীতিকে মানবতাবাদী নীতি বলা চলে।  
.
Writer and Editor Kanchan Das 🙏🏿

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সনাতন ধর্মে ঘুষ ও দুর্নীতি নিয়ে কঠোর বার্তা

✅সনাতন ধর্মে ঘুষ বা দূর্নীতির ব্যাপারে কিরুপ মনোভাব পোষণ করে?
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
উত্তর:--  ঘুষ বা দূর্নীতি হলো এমন একটি বিষয় যার মূল হলাে নিজ স্বার্থ হাসিল করা।  এটা নিজ রাষ্ট্রের সঙ্গে একপ্রকার বিশ্বাসঘাতকতা।  কারণ রাষ্ট্র অাপনার প্রজ্ঞা, উদারতা ও কর্মদক্ষতা দেখে অাপনাকে একটি দায়িত্ত্ব দেবে, কিন্তু সেই দায়িত্ত্ব পাওয়ার পর অাপনি তা অসৎ কাজে লাগাবেন অাপনাকে তো অবশ্যই এর শাস্তি পেতে হবে। 
👉🏻 প্রথমত অামাদের দেখতে হবে যে রাষ্ট্রে কি ধরনের ব্যক্তিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োগ করতে বলা হয়েছে---
➖অন্যানপি প্রকুর্বীত শুচী প্রাজ্ঞানবস্থিতা। 
➖সম্যগর্থসমাহর্তনমাত্যান সুপরীক্ষিতান।।
(মনুস্মৃতি-- ৭/৬০ )
*️⃣অনুবাদ--
"পবিত্ৰাত্মা, বুদ্ধিমান, স্থিরবুদ্ধি, ধন সামগ্রী সংগ্রহে অতিশয় নিপুণ এবং সুপরীক্ষিত ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিযুক্ত করিবেন ॥"
.
➖নিবৰ্ত্তেৰ্তাস্য আবদ্ভিরিতি কর্তব্যতা নৃভিঃ। ➖তাবতােতন্দ্রিতা দক্ষা প্রকুবীত বিচক্ষণা।।
(মনুস্মৃতি- ৭/৬১)
*️⃣অনুবাদ--
"যতজন লােকের দ্বারা (রাজ) কার্য সম্পাদিত হইতে পারে, ততজন নিরলস বলবান্ এবং সুচতুর প্রধান পুরুষকে অধিকারী অর্থাৎ কর্মচারীরূপে নিযুক্ত করিবেন৷৷*

উপরিউক্ত শ্লোক এটা অনুমান করা যাচ্ছে যে রাজকার্যে বিদ্ধান ব্যক্তিবর্গকে রাজকার্যে নিযুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে।
যদি তাহাদের মধ্য থেকে কেউ নিজের দায়িত্ত্ব ও কর্তব্য ভূলে অসৎ উপায়ে গোপনে ধন লাভ করার চেষ্টা করে তাদের কি করা উচিত?
এই ব্যাপারে শাস্ত্রে বলা অাছে---
➖য়ে কায়িকেভ্যোর্থমেব গৃহ্নীয়ুঃ পাপচেতসঃ। 
➖তেষাং সর্বস্বমাদায় রাজা কুয়াৎ প্রবাসনম্॥
(মনুস্মৃতি--৭/১২৪  )
*️⃣অনুবাদ--- 
"যে রাজকর্মচারী অন্যায়রূপে বাদী ও প্রতিবাদীর নিকট হইতে গােপনে ধন লইয়া পক্ষপাতপূর্বক অন্যায় করে, তাহাকে যথােচিত দণ্ডদান করা কর্তব্য। তাহার সর্বস্ব হরণ করিয়া তাহাকে এমন স্থানে রাখিবেন, যেন সে স্থান হইতে তাহার প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব না হয়। তাহাকে দণ্ডদান করা না হইলে, তাহার অনুসরণ করিয়া অন্য রাজকর্মচারিগণও তাহার ন্যায় কুকর্ম করিতে পারে। কিন্তু তাহাকে দণ্ড দেওয়া হইলে অন্য সকলে রক্ষা পাইবে।"
.
★উত্তম গুন সম্পন্ন ব্যক্তি বর্গকে রাজকার্যে নিযুক্ত করতে বললেও তাদের কুকর্মে তাদের শাস্তির নির্দেশ ও দেয়া হচ্ছে। 
অতএব বলা যায় যে  ঘুষ বা দূর্নীতিকে সনাতন ধর্ম কখনোই সমর্থন করেনা। বরং এর সাথে জড়িতদের শাস্তির নির্দেশ দেয়া হচ্ছে শাস্ত্রে।
.
Writer and Editor Kanchan Das 

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১৮

বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থা

সমস্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন এবং অর্বাচিন সংস্কৃতির মধ্যে সমাজ কে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্তিকরন ইহা দৃষ্টিগোচর হয়।
পরন্তু "সা প্রথমা সংস্কৃতি বিশ্বচারা" রূপে প্রসিদ্ধ এত সমৃদ্ধ বৈদিক সংস্কৃতি মধ্যে যে বর্নাশ্রমব্যবস্থার সুন্দর স্বরূপউপলব্ধ হয় উহা কোন অন্য সংস্কৃতি মধ্যে দৃষ্টিগোচর হয় না। বৈদিক বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার প্রারম্ভিক সংগঠিত রূপ মধ্যে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির একাই মহত্বপূর্ণ বুঝে, কার্য
শ্রম তথা যোগ্যতাকে মুখ্য আধার স্বীকার করে তথা ব্যক্তিকে বিভিন্ন বর্ণে বিভাজিত করে ব্যষ্টি এবং সমষ্টির অতি
সুন্দর সমন্বয় সমুপস্খিত করে। যা বিশ্বের অন্য সংস্কৃতির মধ্যে উপলব্ধ হয় না।
সাহিত্য মধ্যে বর্ণ শব্দের প্রয়োগ সমুপলব্ধ হয়। বর্ণ শব্দ বৃজ বরণে ধাতু দ্বারা নিষ্পন্ন অথবা বর্ণ ধাতু দ্বারা ঘঞ প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয়। বর্ণের অন্য অর্থ কোষ
কার সংকলিত করেছে পরন্তু এই প্রকরনে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্রের বোধই রয়েছে। তাদের এই শ্রেণীকরনকে বর্ণ ব্যবস্থা বলে। এবং বেদের
অনুসারে হওয়ার জন্য উহাকে বৈদিকী শব্দ দ্বারা অবহিত করা হয়েছে। এই প্রকার এই সমস্ত পদে বর্ণের সাথে আশ্রম ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে। আশ্রম শব্দও আঞ পূর্বক শ্রমু ধাতু
দ্বারা নিষ্পন্ন হয়। যাকে ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ,বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস এই চার শ্রেণীকরনে বিভক্ত করা হয়।
বৈদিক মান্যতা অনুযায়ী গুণকর্মের আধারের উপর শ্রেণীর
নির্ধারন হয়েছে। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বেদের ভাষ্য এবং ঋগবেদাদী ভাষ্য ভূমিকাই স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন
বেদের অনুসারে বর্ণ ব্যবস্থা করার পরই সমাজের সম্মক উন্নতি সম্ভব।বেদই সব সত্য বিদ্যার পুস্তক তথা ঈশ্বরই সমস্ত
বিদ্যার মূল। অতঃ বৈদিক মন্ত্রের আধারের উপর দেখা যায় তো ইহা স্পষ্ট হয় যে,
"ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীত" ইহা বেদের প্রশ্নোত্তর বিধি দ্বারা বুঝানো হয়েছে। যখন আমরা এই মন্ত্রের অর্থ জানার
প্রয়াস করি তখন পূর্বের মন্ত্র দেখা অতন্ত্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই প্রকার- "মুখং কিমস্যাসীৎ কীং বাহু কিমূরু পাদা
উচ্যতে" ইহার অর্থ বোধের জন্য পানিনীয় সূত্রানুসারে,
ধাত্বর্থানাং সমন্ধে সর্বকালোষ্বেতে বা স্যুঃ "ছন্দাসি লুঙ্লিঙ্লিট" এর ধ্যান মন্ত্রে স্থিত অর্থ হচ্ছে, (অস্য) ইহার (মুখম) মুখ (কিম) কোনটি (অসীত) হয়, ছিল অথবা
আছে (কিম বাহু) দুই বাহু কোনটি (কিম উরু) উরু কোনটি (পাদ
উচ্যতে) ইহার পা কোনটি?
এই চার প্রশ্ন করা হয়েছে। ইহার উত্তর বেদমন্ত্র
দিয়েছেন-
→ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্ বাহু রাজন্যঃ কৃতঃ।
→ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পদ্ভায়াং শুদ্রোঅজায়তঃ।।
(ঋগবেদ ১০।৯০।১২)
.
তাহার মুখ ব্রাহ্মণস্বরূপ, দুই বাহু ক্ষত্রিয়স্বরূপ, যে বৈশ্য ইহা তাহার
উরুস্বরূপ এবং তাহার পা শুদ্রস্বরূপ।
পূর্বে লিখিত প্রশ্নের চার উত্তর এই মন্ত্রে উপস্থিত করা হয়েছে। কিছু বিদ্বান ইহার বিপরীত অর্থ প্রস্তুত করে বলে যে, এই পরম পুরুষের মুখ থেকে ব্রাহ্মন উৎপন্ন হয়েছে ইত্যাদি। ইহা কেবল অনর্গল প্রলাপ মাত্র। ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কোথাও মুখাদি থেকে বর্ণের উৎপত্তির বর্ণনা নেই কারন ইহা সৃষ্টি বিরুদ্ধ এবং অবৈজ্ঞানিক।।কাব্য শাস্ত্রে অলঙ্কার কাব্যের শোভা বর্ধক। বেদের মধ্যেও অনেক অলংকারিক বর্ণনা এসেছে। এখানেও বেদ তথা ঈশ্বরের অভিপ্রায় এই যে, সর্বপ্রথম সংসার মধ্যে জীবনাচারের নীতি অনুসারে মনুষ্যকে চার ভাগে ভাগ করা উচিত। যে মুখের কার্য্য করে সে ব্রাহ্মণ, যে বাহুর কার্য করে ক্ষত্রিয়, যে উরুর কার্য করে সে বৈশ্য এবং যে পা এর কার্য করে তাকে শুদ্র বলে অবিহিত করা হয়। প্রথমে মুখের কার্যের উপর দৃষ্টিপাত করা যাক-
.
মুখের কার্যঃ এই ভাগে জ্ঞান প্রাপ্তি করা সমস্ত ইন্দ্রীয় বিদ্যমান। এখানে সত্য অসত্যের নির্ণয় করা হয়। ভালো মন্দ সত্য অসত্যের নির্ণয করে ক্ষত্রিয়াদিকে আজ্ঞা দ্বারা প্রেরিত করে। শ্রবন মনন নিদিধ্যাসন বিবেক আদি যা কিছু বিচার সব মস্তকই করে। যেভাবে শরীরের মধ্যে মস্তক শরীরের মুখ্য ভাগ রূপে প্রধান কার্য করে। এভাবে বিবেকপূর্বক নিঃস্বার্থ এবং পরোপকারী যে মস্তিষ্কের মতো সমাজের কার্য করে তাহাকে ব্রাহ্মণ বলে। সে বিরাট বিশ্বের মানব সমূহের মুখ সদৃশ।
.
বাহুর কার্যঃ সম্পূর্ন শরীরের রক্ষার দায়িত্ব দুই বাহুর উপর আশ্রিত। ইহা শরীরের মধ্যে কোন বিপদ আসলে রক্ষার জন্য উদ্যত হয়। যুদ্ধ ক্ষেত্রে সংগ্রাম এই দুই বাহুই করে। এই রূপ সমাজরূপী পুরুষের উপর সঙ্কটাপন্ন স্থিতি আসলে নিজ বাহুবল দ্বারা ক্ষত্রিয় এদের ত্রান করে। " ক্ষত্রাত্ বিল ত্রায়ন ইত্যুদগ্রয়ত্রস্য শব্দৌ ভুবনেষু রুঢ"
.
উরুর কার্যঃ কটি দেশের অধ দেশকে উরু বলা হয়। এই ভাগকে বৈশ্য বলা হয়েছে। উরু যেমন সর্বত্র গমনে সাহায্য করে। সেইরূপ যিনি উরুর ন্যায় সকল দেশে গমনাগমন ও প্রবেশ করেন, উপার্জিত ধন সঞ্চয় ও সঞ্চিত ধনকে সমাজে যথাযথরূপে বিতরণ করেন, তিনিই বৈশ্য।
.
পা এর কার্যঃ আমাদের শরীরের সমস্ত ভার পা বহন করে। পা এর অভাবে শরীর পঙ্গু হয়ে যায়। তখন সংগ্রামের মধ্যে
বাহুবল কি আসবে? এইরূপ সমাজ সেবক বিনা সেই সমাজ পঙ্গু হয়ে যায়। এবং পা বিনা সমাজের উন্নতি কদাপি সম্ভব নয়।
সেইরূপ যিনি শারীরিক পরিশ্রম দ্বারা সমাজের ভার বহনপূর্বক
সমাজের সেবা করেন, তিনিই শূদ্র।
.
অতএব বৈদিক বর্ণ ব্যবস্থা গুন এবং কর্মের উপরই আধারিত। একজন ক্ষত্রিয়ও ব্রাহ্মণত্ব লাভ করতে পারে। বিশ্বামিত্র যেমন ক্ষত্রিয় হতে ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছিলো। বৈবস্বত মনুর পূত্র নভগ রাজ্য ত্যাগ করে ব্রাহ্মণ হয়ে যায় এবং গুরুকুল
স্থাপিত করে। একজন ব্যক্তির চার পুত্রও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র হতে পারে।
.
.
→কার্টেসি -- অগ্নিবীর ব্লগ।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮

পবিত্র বেদে অশ্লীলতা বিষয়ে অপপ্রচারের জবাব

☑পবিত্র বেদে অশ্লীলতা বিষয়ে অপপ্রচারের জবাব---
____________________________________
👉অপপ্রচার -- হিন্দু ধর্মগ্রন্থে পিতা+ কন্যার বিবাহ, অবৈধ যৌন সম্ভোগ অনুমতি দেয় ঈশ্বর। (ঋগবেদ ১০ মন্ডল ৬১ সুক্ত( ৫-৮) মন্ত্র।)
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
.
☑জবাব-- আজকাল অনলাইনে কিছু তমোনিষ্ঠ পাপবুদ্ধিদের আধিক্য
বৃদ্ধি পেয়েছে। বেদের মহত্ততার হানি ঘটানোর জন্য
এদের প্রচেষ্টা। যদিও বেদের মতো উচ্চ আধ্যাত্মিক
জ্ঞান এসব পাপ বুদ্ধিদের মস্তিষ্কে নেই। যার ফলে এরা
নিজেদের অশ্লিলপূর্ণ জীবনের নোংরা জ্ঞান দিয়ে বেদ বিচার করতে আরম্ভ করেছে।যার দরুন এরা শুধু নিজেদেরই নয় নিজেদের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
.
তাদের দাবি মতে ঋগ্বেদ ১০/৬১/৫-৮ নং মন্ত্রে নাকি পিতা এবং কন্যার মধ্যে অশ্লীল সম্পর্কের কথা অাছে।
- কিন্তু তাদের দেয়া তথ্য অনুসারে এরুপ কোন কথা পাইনি। তাদের দেয়া তথ্যগুলো নিচে খন্ডানো হলো ➖
ঋগ্বেদ ১০/৬১/৫--
प्रथिष्ट यस्य वीरकर्ममिष्णदनुष्ठितं नु
नर्यो अपौहत्
पुनस्तदा वृहति यत्कनाया
दुहितुरा अनुभृतमनर्वा
.
✅বঙ্গানুবাদ✅
রাষ্ট্রপতি কে নতুন বা অনর্বা হওয়া চাই। যে বিধানের নির্মাণ করে সভা বা সমিতি দ্বারা রাষ্ট্র এর সঞ্চালন করবে। সভা কে রাষ্ট্রপতির শক্তি প্রাপ্ত হয়ে যায়। নিশ্চিত (সময়) অবদি পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সভা থেকে শক্তি কে ফেরৎ নিয়ে, নতুন নির্বাচনের জন্য সভা ভঙ্গ করে দেই।
(অনুবাদ--- ভাষ্যকার হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার এর হিন্দি থেকে সরাসরি অনূদিত)
.
✅ঋগ্বেদ ১০/৬১/৬--
मध्या यत्कर्त्वमभवदभीके कामं कृण्वाने
पितरि युवत्याम्
मनानग्रेतो
जहतुर्वियन्ता सानौ निषिक्तं सुकृतस्य योनौ
.
✅বঙ্গানুবাদ✅
নির্বাচন ঠিক সময়ে হয়ে যাওয়া চাই। সভার কোনো কার্য অসম্পূর্ণ থাকে তবে, সভা ভঙ্গ হয়ে নতুন নির্বাচন হয়ে যাওয়া চাই, নতুন সভা সেই কার্য কে পূর্ণ করে নেবে।
(অনুবাদ--- ভাষ্যকার হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার এর হিন্দি থেকে সরাসরি অনূদিত)
.
✅ঋগ্বেদ ১০/৬১/৭
पिता यत्स्वां दुहितरमधिष्कन्क्ष्मया रेतः
संजग्मानो नि षिञ्चत् ।
स्वाध्योऽजनयन्ब्रह्म देवा वास्तोष्पतिं
व्रतपां निरतक्षन् ॥
.
✅বঙ্গানুবাদ✅
রাষ্ট্রপতি সভার সভ্যকে নির্বাচন করে। নির্বাচিত হওয়ার পরে  তারা রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে। রাষ্ট্রপতির মুখ্য কার্য রাষ্ট্র রক্ষার নিয়ম কে পালন করানো।
(অনুবাদ--- ভাষ্যকার হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার এর হিন্দি থেকে সরাসরি অনূদিত)
.
.
→পার্ট----- (২)
→অনলাইনে কিছু গুনীজনদের অানাগোনা দেখা যাচ্ছে। এনারা অনলাইনে অনেক পান্ডিত্য দেখাতে গিয়ে কিছু মায়াকান্না করে থাকে। তাদের নতুন উদ্ভাবন হলো পবিত্র বেদে নাকি অশ্লীলতা রয়েছে। এনারা পোস্টের শুরুতে কিছু কথা বলে, যেমন ধরুন--- হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বেদে ভয়াবহ অশ্লীলতা,যৌনতা যা লিখতে ও পড়তে লজ্জা করে।
* সম্মানিত হিন্দু বন্ধুগন,আপনারা কেন যে ধর্মগ্রন্থ পড়েন না? 😆😂😂😆
.
→তিনি এমন পান্ডিত্য দেখালেন যে তিনি ছাড়া অার কেউ পবিত্র বেদ পড়ে দেখেনি। 😂😂😂
.
👉তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক খন্ডন করা হলো নিম্নে---
.
1⃣  যজুর্বেদ ২৩/২০- ঈশ্বর ঘোড়া দ্বারা যৌন কর্ম ও স্ত্রী যোনীপথে বীর্যপাত করতে বলে।
_____________________________
✔জবাব➖ উক্ত মন্ত্রে এরুপ কোন কথা নেই, ভূলভাল উৎস থেকে পড়লে সেটা দায় কি পবিত্র বেদের নাকি বক্তার???
.
👉 মন্ত্রটি নিম্নরুপ---
→ताऽउभौ चतुरः पदः सम्प्र सारयाव स्वर्गे लोके।
→प्रोर्णुवाथां वृषा वाजी रेतोधा रेतो दधातु ॥
.
✔বঙ্গানুবাদ✔
প্রভুর সাথে মিলিত  (একাত্মা) হয়েই প্রভুর কৃপাতেই ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ এই চার পুরুষার্থ সিদ্ধ করো এবং এই উপায়তেই নিজেকে স্বর্গলোকে স্থাপিত করো ।। প্রভু যেন রাজা প্রজা সকলকে শক্তিশালী বানান ।।
(অনুবাদ- হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
.
👉উক্ত মন্ত্রে মনুষ্যকে প্রভুর সাথে একাত্মা হয়ে  চার পুরুষার্থ সিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে।
কোন খারাপ কিছুকে নির্দেশ করছেনা। ✌✌
.
2⃣যজুর্বেদ- ** ২৩/২১- ঘোড়ার বীর্য নাকি রমনীগেনর জীবন ও ভোজন স্বরুপ।
_______________________________
👉জবাব➖ টুপি পড়াবেন ভালো কথা, তবে কেনো হিন্দুদের ভূলভাল বুঝিয়ে টুপি পড়াতে চাচ্ছেন????
ওদের দেয়া যজুর্বেদ ২৩/২১ মন্ত্রটির প্রকৃত সত্য নিম্নরুপ---
→उत्सक्थ्या ऽ अव गुदं धेहि सम् अञ्जिं चारया वृषन् ।
→य स्त्रीणां जीवभोजनः॥
✔বঙ্গানুবাদ✔
রাজা রাষ্ট্রে ব্যভিচার থামানোর জন্য বিলাসী ( ব্যাভিচারী, চরিত্রহীন ) পুরুষকে উল্টো করে ঝুলিয়ে শাস্তি দেবেন তথা রাষ্ট্রে ব্যাভিচারের হানি এবং ক্ষতি ও চরিত্র সংযমের লাভ ও সমাজে চরিত্র সংযমের গুরুত্ব প্রজাদের মধ্যে প্রচার করে বোঝাবেন এবং এই বিষয়ে জ্ঞানের প্রচার রাষ্ট্রে করাবেন , যাতে রাজ্যের প্রজাদের মনোবৃত্তিতে কখনো ব্যাভিচারের চিন্তা না আসে এবং যারা ব্যাভিচারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ও মনোবৃত্তিতে যাতে পরিবর্তন ঘটানো যায় ।।
(অনুবাদ- হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
.
👉 এখানে মূলত ব্যভিচার এর শাস্তি এবং মানুষকে সৎ পথে অানার জন্য রাজাকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে সকলকে যাতে ব্যভিচার থেকে দূরে রাখতে পারে। মিথ্যাচারীদের দেয়া কথা ছিটে ফোটাও নেই। ✌✌✌
.
3⃣ যজুর্বেদ- ২৩/২৮-হায় হায়! ! স্থূল ( চওড়া,মোটা) শিশ্ন ( পুরুষাংগ বা নুনু)
পেয়ে নাকি স্ত্রী যোনী কাপে!!!
_____________________________
👉জবাব➖ সকলের মনে হতে পারে এরুপ অপপ্রচার করে কেমন করে?
এগুলো ওদের নিম্ন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
👉মন্ত্রটি নিম্নরুপ---
यद् अस्या ऽ अम्̐हुभेद्याः कृधु स्थूलम् उपातसत्
मुष्काविदस्या ऽ एजतो गोशफे शकुलाव् इव
.
✔বঙ্গানুবাদ✔
রাজা রাষ্ট্রে দন্ড ব্যবস্থাকে এই প্রকারে সুব্যবস্থিত করে রাখবেন , যাতে চোর-ডাকাত সেই দন্ডবিধির ভয়ে কম্পিত হয়ে এই চুরি-ডাকাতির পথ ই ছেড়ে দেয়।
(অনুবাদ- হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
.
👉 উক্ত মন্ত্রে রাজার প্রতি নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে চুরি ডাকাতির শাস্তি এমন ভাবে করতে হবে যাতে করে শাস্তির ভয়ে চুরি ডাকাতি করা বন্ধ হয়ে যায়।  ✌✌✌
(স্বামী মামুয়াচার্য্য Full ফর্মে অাছে) ✋✋ তথাস্তু বৎস।
➖➖➖➖➖➖➖➖
4⃣ ২৩/২৯-দেব গন ক্রীড়া করলে নারীর উরু ও দেখা যায়।
____________________________________
👉জবাব➖ অাবারো একই সিষ্টেমে চলে গেলো।
উক্ত মন্ত্রটি নিম্নরুপ➖
→यद् देवासो ललामगुं प्र विष्टीमिनम् आविषुः ।
→सक्थ्ना देदिश्यते नारी सत्यस्याक्षिभुवो यथा ॥
.
✔বঙ্গানুবাদ✔
যখন রাজাকে বিদ্বান ব্যাক্তিগণ ব্যাপ্ত করে থাকেন, তখনই কোনো রাজসভা রাজ্যের প্রজাদের সঠিক সেবা করতে পারে ।।
(অনুবাদ- হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
.
👉উক্ত মন্ত্রটি মূলত রাজার রাজসভায় বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিযুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে, যাতে করে রাজ্যের সব লোক সঠিক সেবা পেতে পারে।
➖➖➖➖➖➖➖➖
5⃣ যজুর্বেদ- ২৩/৩১- শুদ্রগন যদি বৈশ্য রমনীতে আসক্তি হয়, তবে বৈশ্য ক্লেশ অনুভব করবে,সুখী হবে।
_______________________________________
👉জবাব➖ 😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂
এরকম ফন্ডিত এর অনুগ্রহ লাভ করে স্বামী মামুয়াচার্য্য খুবই ধন্য হলো। 👍🏻
.
👉উক্ত মন্ত্রটি নিম্নরুপ---
→यद्धरिणो यवम् अत्ति न पुष्टं बहु मन्यते ।
→शूद्रो यद् अर्यायै जारो न पोषम् अनु मन्यते ॥
.
✔বঙ্গানুবাদ✔
রাজা যদি বিলাসী হয়ে যায় , তবে সেই রাজা ঐ শুদ্র ব্যাক্তির সমান হয়, যে শুদ্র ব্যাক্তি এক উপপত্নীর প্রেমী হয়ে বংশবৃদ্ধির ধারণাকে কোনো তাৎপর্য দেয় না ।।
(অনুবাদ- হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
.
👉 এখানে মূলত রাজার বিলাসীতাকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ রাজা যদি বিলাসী হয় তবে সে শূদ্র ব্যক্তির ব্যভিচারের সমমনা হয়ে যাবে।
.
.
👉 স্বামী মামুয়াচার্য্যের কিছু বলার নেই, যা বলার পাবলিক বলবে।  অার মামুয়াচার্য্য দেখবে।
(✋✋ তথাস্তু বৎস)
কাহারো অনুভূতিতে অাঘাত লাগিলে স্বামী মামুয়াচার্য্য দায়ি থাকিবেনা। 😇
.
✅প্রথমত ধন্যবাদ দিতে হয় মিথ্যাচারকারীকে। কেননা সে যদি মিথ্যাচারটি না করতো তবে অামরা সনাতনীরা এতো সুন্দর একটি কথা পেতামনা।  যদিওবা পাওয়া যেতো তবে সেটা অারো কিছু দিন পর।
.
✅তাদের করা মিথ্যাচারটি কেবল তাদের স্বজাতি ভাইদের খুশি করানোর জন্য।  তাদের দেয়া রেফারেন্সে কোন ধরনের অশ্লীলতা নেই,বরং সেখানে রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্র(রাজ্য) প্রধানের নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতির কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে।
.
👉 অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান হওয়ার দরুন এতে কোন
অশ্লিলতা নেই কিংবা থাকার প্রশ্নই অাসেনা । তাই এসব অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন।
.
➖ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি।।।
.
.
Writer & Editor Kanchan Das

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

শ্রীমদ্ভাগবদ গীতা ১৮.৪৭-৪৮ নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

★অপপ্রচার---- (হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ভবগত গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৪৭ এবং ৪৮ নং শ্লোকর এর মধ্যে রয়েছে এর অর্থ "অন্য ধর্ম সত্য হয় , আবার নিজের ধর্মেও যদি ভুল ধরা পড়ে তবুও নিজের ধর্মই শ্রেষ্ঠ ।
আগুনের উপরে যেমন ধোয়া থাকে , নিজের ধর্ম
গ্রন্থ এর মধ্যেও ভুল থাকতে পারে । **** এ থেকেই প্রমান হয় গ্রন্থটা ঈশ্বরের নাকি মানুষের লেখা?
_________________________________________________
.
→★জবাব------- সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রের অর্থকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা ভিন্ন ধর্মীদের একটা স্বভাব হয়ে গেছে। সনাতন ধর্মের ভূল খুজে বেড়াচ্ছে কতিপয় কিছু লোক, এবং ভূল বের করতে তারা অাবার ভূলের অাশ্রয় নিচ্ছে। অথচ তারাই অাবার বলে "বলুন সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হবে"।
→তাদের সেই বাক্যের বিপরীতে তাই অামাকেও প্রয়োগ করতে হলো পরম সনাতনের সত্যের জয়----
→সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযান।
→য়েনাক্রমন্তৃষ্যয়ো হ্যাপ্তকামা যত্র তত্
সত্যস্য পরমং নিধানম।।"
.
*বঙ্গানুবাদ*
-----সত্যের জয় এবং অসত্যের পরাজয়
অবশ্যম্ভাবী। সত্যের মাধ্যমে সেই
পবিত্র পথ বিস্তৃত যার দ্বারা ঋষিগন
পরমসত্যের নিকট গমন করেছেন!
[মুন্ডক উপনিষদ ৩.১.৬]
.
.
★এবার তাদের দেয়া মিথ্যাটা দেখা দরকার।
→তারা বলেছে শ্রীগীতার ১৮/৪৭-৪৮ শ্লোকে অাছে পরের ধর্ম সঠিক হলেও, যদি নিজের ধর্মে ভূল থাকে তবে নিজের ধর্ম পালন করতে হবে।
→অাবার বলেছে অাগুনের মধ্যে ধোয়া থাকতে পারে, নিজ ধর্ম গ্রন্থেও ভূল থাকতে পারে।
.
.
→এইটুকুই তাদের মিথ্যাচার।।।
.
→প্রথম অামাদের একটা জিনিস দেখতে হবে সেটা হলো তাদের দেয়া উক্ত শ্লোকে কি অাছে???
.
★শ্রীগীতা ১৮/৪৭
→श्रेयान्स्वधर्मो विगुण: परधर्मात्स्वनुष्ठितात्|
→स्वभावनियतं कर्म कुर्वन्नाप्नोति किल्बिषम् || 47
.
→*অনুবাদ*
---- স্বধর্ম দোষ-বিশিষ্ট হইলেও সম্যক্ অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । স্বভাব-নির্দিষ্ট কর্ম করিয়া লোকে পাপভাগী হয় না ।
*(অনুবাদক --- গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)*
.
★এর পরের শ্লোক (শ্রীগীতা ১৮/৪৮) নিম্মরুপ---
→सहजं कर्म कौन्तेय सदोषमपि न त्यजेत् |
→सर्वारम्भा हि दोषेण धूमेनाग्निरिवावृता: || 48
.
→*অনুবাদ*
------- হে কৌন্তেয়, স্বভাবজ কর্ম দোষযুক্ত হইলেও তাহা ত্যাগ করিতে নাই । অগ্নি যেমন ধূমদ্বারা আবৃত থাকে, তদ্রূপ কর্মমাত্রই দোষযুক্ত ।
*(অনুবাদক --- গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)*
.
.
→উল্লেখিত শ্লোক দুটিকে বিশ্লেষন করার অাগে মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাটা ধরিয়ে দিই।
.
১) তারা বলেছে→ আগুনের উপরে যেমন ধোয়া থাকে , নিজের ধর্ম গ্রন্থ এর মধ্যেও ভুল থাকতে পারে ।
.
→প্রকৃত পক্ষে উক্ত শ্লোক ধর্ম গ্রন্থের কোন নাম নিশানাও নেই। সবাই ওদের থেকে জবাবদিহি নিবেন যে এখানের দুইটি শ্লোকে কোথায় বলেছে নিজের ধর্ম গ্রন্থে ভূল থাকতে পারে??????
.
→এবার ব্যাখ্যা করা যাক উক্ত শ্লোকে স্বধর্ম অার পরধর্ম বলতে কি বুঝানো হয়েছে????
.
→গীতা ১৮/৪৭-৪৮ পড়ার পূর্বে অামাদের দেখতে এর অাগের শ্লোকগুলিতে কি অাছে?
→গীতা ১৮/৪১-৪৪
হে পরন্তপ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদিগের কর্মসকল ভাবজাত গুণানুসারে পৃথক্ পৃথক্ বিভক্ত হইয়াছে । ৪১
.
শম, দম, তপঃ, শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধা - এই সমস্ত ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ) । ৪২
.
পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য, কার্যকুশলতা, যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতা, দানে মুক্তহস্ততা, শাসন-ক্ষমতা, এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ) । ৪৩
.
কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য বৈশ্যদিগের এবং সেবাত্মক কর্ম শূদ্রদিগের স্বভাবজাত । ৪৪
.
→উপরের শ্লোক গুলি থেকে এটা স্পষ্ট নির্ণয় করা যাচ্ছে যে ভগবান গুন ও কর্মের দ্বারা যে চতুর্বণ্য সৃষ্টি করেছেন তাদের গুনাবলী গুলি।
→অর্থাৎ যেকোন ব্যক্তির মধ্যে উল্লেখিত গুন বিদ্যমান থাকলে অামরা চিনে ফেলতে পারবো ব্যক্তিটা কোন বর্ণের।
.
→গীতা ১৮/৪৭-৪৮ শ্লোকের স্বধর্ম অার পরধর্ম বলতে চতুর্বর্ণের উক্ত কর্মগুলিকে নির্দেশ করে।
→তাই এখানে সনাতন ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম অার খ্রিষ্টান ধর্মকে টেনে অানাটা মুর্খামী ছাড়া কিছুই নয়।
.
→এবার দেখুন কেনো ভগবান বলেছে স্বধর্ম দোষযুক্ত হলেও সেটা করতে হবে কিংবা উত্তম পরধর্ম হলে সেটা কেনো করতে মানা?
.
অর্জুনকে এটা বলার অর্থ হলো অর্জুন হলো ক্ষত্রিয়। অার ক্ষত্রিয়ের ধর্ম বা কর্ম হলো যুদ্ধ করা। এবং ক্ষত্রিয় ধর্মে বা কর্মে দোষ অাছে সেটা হলো যুদ্ধ করে মানুষ মেরে ফেলা। কিন্তু সেই দোষযুক্ত কাজটি বা কর্মটি বা ধর্মটি অর্জুনকে করতে হবে। অার যদি এটা না করে তবে যুদ্ধে হেরে যাবে অার মৃত্যুবরণ করবে।
.
→একটু বর্তমান অাঙ্গিকে বিচার করুন,,, যেকােন দেশের সেনাবাহিনী সদা নিজেদের দেশরক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু দেশ রক্ষা করতে গেলে তাদের যুদ্ধ করতে হবে, অার যুদ্ধ করলে অবশ্যই ভিন্ন দেশের সেনাদের মারতে হবে। এই "ভিন্ন দেশের সেনা" মারাটা মানবিক ভাবে দোষ। কিন্তু সেটা কর্তব্য। কেননা ভিন্ন দেশের সেনাকে না মারলে সে অাপনার দেশের সেনাকে মেরে ফেলবে।
.
→ ক্ষত্রিয়ের যুদ্ধকর্মে বা কৃষকের কৃষিকর্মেও প্রাণিহিংসা অনিবার্য; কিন্তু এইরূপ হিংসাদিযুক্ত হইলেও তাহা ত্যাগ করিয়া অন্য বর্ণের কর্ম গ্রহণ করা কর্তব্য নয় । কেননা কর্মমাত্রই দোষযুক্ত।
.
★তাই পরিশেষে বলবো শ্রীগীতার দর্শন না বুঝে ভূল ধরতে গেলে নিজেই ভূলের গর্তে পড়ে যাবেন। তখন অার সুপথে অাসতে পারবেননা।
*সত্যমেব জয়তেঃ*
.
.
→ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি।।।

Writer & Editor Kanchan Das

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...