বুধবার, ৩ মে, ২০১৭

ইন্দ্র এবং অহল্যার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের জবাব

জানি এই পোস্টটা পড়ে মন্দমতিরা অবশ্যই বিরোধীতা করবে,করলে করুক গে। এই পোস্টটি কেবল সনাতনীদের জানার জন্য করতেছি।
শুরুতেই আমাদের জানতে হবে মন্দমতিদের মিথ্যাচার বা ভন্ডামী টা কি বিষয়ে???
.
.
নিম্নে তাদের অপপ্রচারটি হলো---
========================
ইন্দ্র গৌতম ঋষির স্ত্রীর সহিত ব্যাভিচারে
প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। যা গৌতম ঋষি জানার পর অহল্যাকে পাষাণ
হওয়ার অভিশাপ প্রদান করেন এবং ইন্দ্রকে সহস্র
যোনীযুক্ত শরীর হওয়ার অভিশাপ দেন।
========================
.
.
★এই অপপ্রচারটি প্রায় সব হিন্দু বিদ্ধেষী পেজে কিংবা গ্রুপে পাবেন যা দিয়ে সনাতনীদের উল্লু বানানো হয়, আর হিন্দুরাও গ্লানিতে ভোগে ছিঃ এতো নোংরা হিন্দু ধর্ম??
আমি থাকবোনা এই নোংরা ধর্মে।
ব্যাস হয়ে গেলো অন্য ধর্মে ধর্মান্তর। যেখানে তার সত্যটা জানার আগ্রহ নাই সেখানে সে কীভাবে নিজ ধর্ম অধিষ্টিত ধাকবে???
.
উক্ত ঘটনার বিশ্লেষণ করার পূর্বেই আমাদের জানতে হবে ইন্দ্র কে???
.
ইন্দ্র কোন দেবতা বিশেষ নয় এটা একটা পদবী। যদিও বা ভন্ডদের মতো ইন্দ্রকে দেবতা ভেবে নিই তাহলেও উক্ত ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ কঠিন হবে না।
পবিত্র বেদে ইন্দ্রকে অনেক নামে স্ত্ততি করা হয়েছে, তাঁর মধ্যে একটা হলো "সহস্রাক্ষ"
(সূত্র--- অথর্ববেদ ৬/৪/১)
.
সহস্রাযোনী নামের একটা কথা এসেছে সেটা এসেছে একটি মাত্র শব্দের কারণে সেটা হলাে "ভগ"।
ভগ শব্দটাকেই আগে ক্লিয়ার করা প্রয়োজন।
ভগ অর্থ যোনী এটা আধুনিককালের রচিত। কিন্তু "ভগ" শব্দের প্রাচীন অর্থ হলো ধন বা সম্পদ।
নিরুক্ত ১/৩/১৫ তে স্পস্ট উল্লেখ আছে "ভগো ভজতেঃ"। ভজ ধাতুর সঙ্গে ঘঞ প্রত্যয় ক'বে ভগ শব্দ নিষ্পন্ন। ভগ শব্দের অর্থ ধন বা ঐশ্বর্য। ভগ বা ঐশ্বর্য যার আছে তিনিই ভগবান। এখানে পার্থিব ঐশ্বর্য না বুঝিয়ে ষড়ৈশ্বর্য কে বোঝায়। যার ষড়ৈশ্বর্য আছে এটা না বলে যদি বলা হয় যার যোনী আছে তবে সেটা ভগবান্ হবে না। কেননা বৈদিক গ্রন্থের শব্দ বিশ্লেষণের জন্য বৈদিক ব্যকরণ আবশ্যক। শ্রীকৃষ্ণ তার ভগ বা ঐশ্বর্যের কথা উল্লেখ করেছে শ্রীগীতার দশম অধ্যায়ে।
.
ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬ তে স্পষ্ট বলা হয়েছে "এক সত্যা পরমব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র,মিত্র,বরুণ,অগ্ন
ি,দিব্য,সুপর্ণ, গরুৎমান্,যম,মাত
ারিশ্বা, আদি বহু নামে ডাকেন"
তাহলে উক্ত শ্লোক অনুসারে বুঝা গেল ইন্দ্র পরমেশ্বরের একটি নাম।
ইন্দ্র কোন দেবতা বিশেষ নয় এটা একটা গুনবাচক না। যদিও বা ভন্ডদের মতো ইন্দ্রকে দেবতা ভেবে নিই তাহলেও উক্ত ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ কঠিন হবে না।
পবিত্র বেদে ইন্দ্রকে অনেক নামে স্ত্ততি করা হয়েছে, তাঁর মধ্যে একটা হলো "সহস্রাক্ষ"
(সূত্র--- অথর্ববেদ ৬/৪/১)
.
আবার
সূর্য হলো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ঐশ্বর্যবান এতে কারো সন্দেহ নেই।
পুরাণাদিতে ভগ দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম --
কূর্মপুরান, পূর্বাভাগ ৪২/২০ অনুসারে ভগ ভাদ্র মাসের সূর্য।
.
স্কন্দপুরান, প্রভাসখন্ড ১০১/৬০ অনুসারে ভগ মাঘ মাসের সূর্য।
.
মৈত্রয়নী সংহিতা ১/৬ এবং ১২ অনুসারে ভগ শব্দের অর্থ অনূদিত আদিত্য।
.
ঋগ্বেদ (৭/৪১/২) মন্ত্র ভগকে আদিত্যরুপে বর্ণনা করা হয়েছে --
--প্রাতর্জিতং ভগমুগ্রং হুবেম্ বয়ং পুত্রমদিতেঃ।
অর্থ---আমরা প্রাতঃকালে তমোবিজয়ী অদিতির অর্থাৎ প্রাতঃসন্ধার পূত্র উদ্গর্ণ অর্থাৎ উদযার্থ সমুদ্যত উদিত প্রায় ভগকেই আহ্বান করিতেছি"।
.
তাহলে বুঝা গেল ভগ অর্থ যোনী নয় বৈদিক ব্যকরণ অনুসারে ভগ অর্থ আদিত্য কিংবা সূর্য। এখানে কিংবা ত্যানাবাজির আর কোন সুযোগ রাখি নাই।
.
ভগ অর্থ সূর্য, তাই বুঝা গেলো সহস্রাভগ মানে সহস্রা সূর্য।
.
এখন আসি সহস্রাযোনী নাকি সহস্রাক্ষ???
ইন্দ্রকে পরমেশ্বর রুপে কল্পনা করা হয়ে পবিত্র বেদের অসংখ্য মন্ত্রে,
ভন্ডদের মিথ্যাচার গৌতম ঋষির অভিশাপের ফলে ইন্দ্রের সহস্রাভগ উৎপন্ন হয়েছে ভগ মানে সূর্য সেটা তো আগেই প্রমাণ হয়েছে তাইলে সহস্রাভগকে সহস্রাসূর্য মানতে কোন সমস্যা নেই।
শ্রীগীতায় সূর্যকে ঈশ্বরের চোখ রুপে কল্পনা করা হয়েছে। (১১/১৯)
যে চক্ষু(সূর্য) সৃষ্টির আদি থেকেই ছিলো সেটা ঋষি গৌতমের অভিশাপের ফলে কেমনে ওঠবে???
.
তাহলে অহল্যা উপখ্যান যে রুপক কাহিনী সেটা নিয়ে নিশ্চয় সন্দেহ নেই কারো?
.
.
★ অহল্যা উপাখ্যান যে রুপক সেটা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।  যদিও অনেকেই এটাকে বাস্তব সত্য কাহিনী বলে প্রচার করে। তাই তাদের জন্য এই ঘটনার ব্যাখ্যাটা দেওয়া অতীব জরুরী।
.
★সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অহল্যা উপাখ্যানের তাৎপর্যের বিশ্লেষন দিতে গিয়ে বলেন - " অহল্যা অর্থাৎ হলের দ্বারা কর্ষিত হয়না -- কঠিন, অনুর্বর। ইন্দ্র বর্ষণ করিয়া সেই কঠিন ভূমিকে কোমল করেন,জীর্ণ করেন- এজন্য ইন্দ্র অহল্যার জার। জ ধাতু থেকে জার শব্দটি নিষ্পন্ন হয়। বৃষ্টির দ্বারা ইন্দ্র তাহাতে প্রবেশ করে, এজন্য তিনি অহল্লাতে অভিগমন করেন।
.
বঙ্কিম চন্দ্রের মতে আকাশই ইন্দ্র, এবং আকাশের সহস্র তারকা ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু।  "ইন্দ্র ধাতুবর্ষনে" তদূত্তর র প্রত্যয় করিয়া ইন্দ্র শব্দ হয়, অতএব যিনি বৃষ্টি করেন,তিনিই ইন্দ্র। আকাশ বৃষ্টি করে  অতএব ইন্দ্র আকাশ। ইন্দ্র সহস্রাক্ষ, কিন্তু ইন্দ্র আকাশ। আকাশের সহস্র চক্ষু কে না দেখিতে পায়?
সহস্র তারকাযুক্ত আকাশ, ইন্দ্র সহস্রাক্ষ।  বঙ্কিম চন্দ্র প্রমাণস্বরুপ গ্রীক সহস্রাক্ষ আকাশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।
.
হিন্দু দেবতার মতো গ্রীকদেবতা অার্গসও সহস্রলোচন।
"Greeks had still present to their thought the meaning of #Argos pannoptes, Io,s hundred eyed all seing  guard who was slain by hermes and change in to a peacock for macrobus writes as recognizing in him the star-eyed heaven itself; as the #Aryan #Indra the sky is the thousand eyes "
.
ইন্দ্র দেবতার প্রকৃত স্বরুপ পূর্বেই আলোচনা করেছিলাম, সূর্যের বা অগ্নির যে মূর্তি বারিবর্ষণের উপযোগী অনূকুল পরিবেশের সৃষ্টি করেন তিনিই ইন্দ্র।
শীত ও গ্রীষ্মে মৃত্তিকা শুষ্ক থাকে, হলাকার্যের অযোগ্য----- অহল্যা।
এই সময়ে সূর্যের হরিদ্বর্ণ রশ্মি ভূভাগ থেকে রস আহরণ করে।  বাষ্পীভূত রস আকাশে মেঘরুপে পুঞ্জিভূত হয়, ইন্দ্র বজ্র দ্বারা বারিবর্ষণের প্রতিকূল অবস্থার বৃত্রাদি অসুর কূলকে ধ্বংশ করে বৃষ্টিরুপে অহল্যা বা মৃত্তিকার সঙ্গে মিলিত হন, অহল্যা ভূমি বা হল্যা বর্ষণোপযোগী হয়ে উঠে, কিন্তু বর্ষার আগমনে সূযাগ্নি(সূর্য+অগ্নি) রুপি ইন্দ্র সহস্র কিরণ শোভিত হয়ে প্রকাশিত হন।  ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু উদ্মীলিত হয়।  এই সর্বজন বিধিত প্রাকৃতিক ঘটনায় ইন্দ্র-অহল্যা সংবাদের রুপকে প্রকাশিত হয়।

Writer and Editor Kanchan Das

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...