সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

শ্রীমদ্ভাগবদ গীতা ১৮.৪৭-৪৮ নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

★অপপ্রচার---- (হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ভবগত গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৪৭ এবং ৪৮ নং শ্লোকর এর মধ্যে রয়েছে এর অর্থ "অন্য ধর্ম সত্য হয় , আবার নিজের ধর্মেও যদি ভুল ধরা পড়ে তবুও নিজের ধর্মই শ্রেষ্ঠ ।
আগুনের উপরে যেমন ধোয়া থাকে , নিজের ধর্ম
গ্রন্থ এর মধ্যেও ভুল থাকতে পারে । **** এ থেকেই প্রমান হয় গ্রন্থটা ঈশ্বরের নাকি মানুষের লেখা?
_________________________________________________
.
→★জবাব------- সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রের অর্থকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা ভিন্ন ধর্মীদের একটা স্বভাব হয়ে গেছে। সনাতন ধর্মের ভূল খুজে বেড়াচ্ছে কতিপয় কিছু লোক, এবং ভূল বের করতে তারা অাবার ভূলের অাশ্রয় নিচ্ছে। অথচ তারাই অাবার বলে "বলুন সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হবে"।
→তাদের সেই বাক্যের বিপরীতে তাই অামাকেও প্রয়োগ করতে হলো পরম সনাতনের সত্যের জয়----
→সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযান।
→য়েনাক্রমন্তৃষ্যয়ো হ্যাপ্তকামা যত্র তত্
সত্যস্য পরমং নিধানম।।"
.
*বঙ্গানুবাদ*
-----সত্যের জয় এবং অসত্যের পরাজয়
অবশ্যম্ভাবী। সত্যের মাধ্যমে সেই
পবিত্র পথ বিস্তৃত যার দ্বারা ঋষিগন
পরমসত্যের নিকট গমন করেছেন!
[মুন্ডক উপনিষদ ৩.১.৬]
.
.
★এবার তাদের দেয়া মিথ্যাটা দেখা দরকার।
→তারা বলেছে শ্রীগীতার ১৮/৪৭-৪৮ শ্লোকে অাছে পরের ধর্ম সঠিক হলেও, যদি নিজের ধর্মে ভূল থাকে তবে নিজের ধর্ম পালন করতে হবে।
→অাবার বলেছে অাগুনের মধ্যে ধোয়া থাকতে পারে, নিজ ধর্ম গ্রন্থেও ভূল থাকতে পারে।
.
.
→এইটুকুই তাদের মিথ্যাচার।।।
.
→প্রথম অামাদের একটা জিনিস দেখতে হবে সেটা হলো তাদের দেয়া উক্ত শ্লোকে কি অাছে???
.
★শ্রীগীতা ১৮/৪৭
→श्रेयान्स्वधर्मो विगुण: परधर्मात्स्वनुष्ठितात्|
→स्वभावनियतं कर्म कुर्वन्नाप्नोति किल्बिषम् || 47
.
→*অনুবাদ*
---- স্বধর্ম দোষ-বিশিষ্ট হইলেও সম্যক্ অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । স্বভাব-নির্দিষ্ট কর্ম করিয়া লোকে পাপভাগী হয় না ।
*(অনুবাদক --- গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)*
.
★এর পরের শ্লোক (শ্রীগীতা ১৮/৪৮) নিম্মরুপ---
→सहजं कर्म कौन्तेय सदोषमपि न त्यजेत् |
→सर्वारम्भा हि दोषेण धूमेनाग्निरिवावृता: || 48
.
→*অনুবাদ*
------- হে কৌন্তেয়, স্বভাবজ কর্ম দোষযুক্ত হইলেও তাহা ত্যাগ করিতে নাই । অগ্নি যেমন ধূমদ্বারা আবৃত থাকে, তদ্রূপ কর্মমাত্রই দোষযুক্ত ।
*(অনুবাদক --- গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)*
.
.
→উল্লেখিত শ্লোক দুটিকে বিশ্লেষন করার অাগে মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাটা ধরিয়ে দিই।
.
১) তারা বলেছে→ আগুনের উপরে যেমন ধোয়া থাকে , নিজের ধর্ম গ্রন্থ এর মধ্যেও ভুল থাকতে পারে ।
.
→প্রকৃত পক্ষে উক্ত শ্লোক ধর্ম গ্রন্থের কোন নাম নিশানাও নেই। সবাই ওদের থেকে জবাবদিহি নিবেন যে এখানের দুইটি শ্লোকে কোথায় বলেছে নিজের ধর্ম গ্রন্থে ভূল থাকতে পারে??????
.
→এবার ব্যাখ্যা করা যাক উক্ত শ্লোকে স্বধর্ম অার পরধর্ম বলতে কি বুঝানো হয়েছে????
.
→গীতা ১৮/৪৭-৪৮ পড়ার পূর্বে অামাদের দেখতে এর অাগের শ্লোকগুলিতে কি অাছে?
→গীতা ১৮/৪১-৪৪
হে পরন্তপ, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদিগের কর্মসকল ভাবজাত গুণানুসারে পৃথক্ পৃথক্ বিভক্ত হইয়াছে । ৪১
.
শম, দম, তপঃ, শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধা - এই সমস্ত ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ) । ৪২
.
পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য, কার্যকুশলতা, যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতা, দানে মুক্তহস্ততা, শাসন-ক্ষমতা, এইগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম (লক্ষণ) । ৪৩
.
কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য বৈশ্যদিগের এবং সেবাত্মক কর্ম শূদ্রদিগের স্বভাবজাত । ৪৪
.
→উপরের শ্লোক গুলি থেকে এটা স্পষ্ট নির্ণয় করা যাচ্ছে যে ভগবান গুন ও কর্মের দ্বারা যে চতুর্বণ্য সৃষ্টি করেছেন তাদের গুনাবলী গুলি।
→অর্থাৎ যেকোন ব্যক্তির মধ্যে উল্লেখিত গুন বিদ্যমান থাকলে অামরা চিনে ফেলতে পারবো ব্যক্তিটা কোন বর্ণের।
.
→গীতা ১৮/৪৭-৪৮ শ্লোকের স্বধর্ম অার পরধর্ম বলতে চতুর্বর্ণের উক্ত কর্মগুলিকে নির্দেশ করে।
→তাই এখানে সনাতন ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম অার খ্রিষ্টান ধর্মকে টেনে অানাটা মুর্খামী ছাড়া কিছুই নয়।
.
→এবার দেখুন কেনো ভগবান বলেছে স্বধর্ম দোষযুক্ত হলেও সেটা করতে হবে কিংবা উত্তম পরধর্ম হলে সেটা কেনো করতে মানা?
.
অর্জুনকে এটা বলার অর্থ হলো অর্জুন হলো ক্ষত্রিয়। অার ক্ষত্রিয়ের ধর্ম বা কর্ম হলো যুদ্ধ করা। এবং ক্ষত্রিয় ধর্মে বা কর্মে দোষ অাছে সেটা হলো যুদ্ধ করে মানুষ মেরে ফেলা। কিন্তু সেই দোষযুক্ত কাজটি বা কর্মটি বা ধর্মটি অর্জুনকে করতে হবে। অার যদি এটা না করে তবে যুদ্ধে হেরে যাবে অার মৃত্যুবরণ করবে।
.
→একটু বর্তমান অাঙ্গিকে বিচার করুন,,, যেকােন দেশের সেনাবাহিনী সদা নিজেদের দেশরক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু দেশ রক্ষা করতে গেলে তাদের যুদ্ধ করতে হবে, অার যুদ্ধ করলে অবশ্যই ভিন্ন দেশের সেনাদের মারতে হবে। এই "ভিন্ন দেশের সেনা" মারাটা মানবিক ভাবে দোষ। কিন্তু সেটা কর্তব্য। কেননা ভিন্ন দেশের সেনাকে না মারলে সে অাপনার দেশের সেনাকে মেরে ফেলবে।
.
→ ক্ষত্রিয়ের যুদ্ধকর্মে বা কৃষকের কৃষিকর্মেও প্রাণিহিংসা অনিবার্য; কিন্তু এইরূপ হিংসাদিযুক্ত হইলেও তাহা ত্যাগ করিয়া অন্য বর্ণের কর্ম গ্রহণ করা কর্তব্য নয় । কেননা কর্মমাত্রই দোষযুক্ত।
.
★তাই পরিশেষে বলবো শ্রীগীতার দর্শন না বুঝে ভূল ধরতে গেলে নিজেই ভূলের গর্তে পড়ে যাবেন। তখন অার সুপথে অাসতে পারবেননা।
*সত্যমেব জয়তেঃ*
.
.
→ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি।।।

Writer & Editor Kanchan Das

সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭

দেবী কালীকে নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব

→ বর্তমানে কিছু অকালকুষ্মাণ্ড লোকের  অাগমনে অনলাইনে বেশ কিছু বিভ্রান্তকর লেখা পাচ্ছি। কেবল হিন্দু বিদ্ধেষী মুক্তমণা ব্লগ ছাড়াও ছাগু মার্কা অনেক ব্লগ সাইটে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কুৎসার বিবরণ রয়েছে।
.
→তাদের নিকৃষ্ট একটি বিভ্রান্তিকর ও নোংরা মানসিকতার লেখা নিচে দিলাম---

-----হিন্দু ধর্মের মা কালী ও পাঁঠা বলীর জঘন্যতম ইতিহাস:-
কালী দেবীর কাপড় লাগেনা। সে সব সময়
উলঙ্গই থাকে, তাই কালী দিনে বের হয় না
রাতের বেলাতে বের হতে তার ভালো
লাগে।। তো কালী একদিন রাতের বেলায়
বনের মধ্যে ঘুরতে ছিলো, ঘুরতে
ঘুরতে দেখলো সকাল হয়ে যাচ্ছে, কালী এখন কি করবে?
উলঙ্গ অবস্হায় মানুষে যদি দেখে ফেলে তবেতো কালী লজ্জা পাবে।
কালী চিন্তা করলো এখন কি করা
যায়? আমাকে তো সবাই দেখে ফেলবে হঠাৎ কালী দেখতে পেলো এক যুবক ছাগলের পাল নিয়ে যাচ্ছে, কালী তখন
ছাগীর রূপ ধারন করে সেই ছাগলের পালের মধ্যে প্রবেশ করলো।
.
সেই ছাগলের পালের
মধ্যে এক পাঠা নতুন একটা ছাগী দেখে
উত্তেজিত হয়ে পাঠা কালী রূপী ছাগীর সাথেসঙ্গম করে ফেললো।
এবার ছাগী রূপী কালী ভীষন ক্ষেপে
গেলো, যে এতো বড় সাহস আমি
হলাম একজন দেবী আর আমার সাথে এই
আকাম কুকাম করলো পাঠা? সুতরাংএই
পাঠাকে প্রতিদিন আমার (কালীর) সামনে বলী দিতে হবে।
.
এভাবে কালীপূজায় পাঠা বলীর নিয়ম হয়েছে।।
সূত্রঃ- [কালিকাপুরান:অধ্যায় -১৩:
পাঠাবলী খন্ড:ভুবনময় চট্টোপাধ্যায় :
৪র্থ সংকলন ]
এটা কেমন ধর্ম? যে ধর্মের দেবতাকেপাঠায়
অাকাম কুকাম করে?
:
:
-উক্ত লেখাটি ছাপা হয়েছে এখানে→ http://www.newsforbd.net/blog/blogdetail/detail/8171/SotterBizoy/70694 

→[স্ক্রীনশট --- শেষেরটা ]
____________________________________________

---------------জবাব--------------------

→উক্ত লেখাটির জবাব দেয়ার অাগে সেকুলার সনাতনীদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে চাই,
.
→হে সেকুলার সনাতনী, অাপনারা তো সবকিছুতেই নিরপেক্ষতা দেখান, কিন্তু সনাতন ধর্মের ব্যপারে অাপনাদের কেনো এতো নোংরামী???
→অাপনারা সনাতন ধর্মীদের যা না হয় তাই বলবেন এটাকে অাপনারা বাকঃস্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেন। কিন্তু যখন সনাতনীরা কিছু বললেই অাপনারা রাস্তায় নামেন মিছিল করেন!
→এই থেকেই বোঝা যাচ্ছে অাপনারা এক একটা বেজন্মার বাচ্চা। কেননা অাপনি নিরপেক্ষতার বানী কেবল সনাতন ধর্মকে অাঘাত করতে ব্যবহার করেন, কিন্তু অন্য ধর্মকে নিয়ে কেউ কিছু বললেই অাপনাদের গাত্র জ্বালা করে।
.
.
→এবার উপরের দেয়া কাহিনীটার সত্যতা কতোটা তা একটু বিশ্লেষন করা দরকার।
.
→হিন্দু বিদ্ধেষীরা উক্ত কাহিনীটা বানিয়েছে তাদের স্বার্থের জন্য। কেননা তারা সনাতন ধর্মকে হেয় করতে পারলেই নিজেদের ধর্মকে শান্তি শান্তি শান্তি বলে ছিল্লাতে পারবে।
.
→উক্ত কাহিনীটা একটু ভূয়া এবং ভ্রান্ত। কেননা তারা কালিকা পুরাণের যে তথ্য দিয়েছে সেটা মিথ্যা বানোয়াট। 
.
→তারা কালিকা পুরাণের ১৩ তম অধ্যায়ের কথা বলেছে। কিন্তু ১৩তম অধ্যায়ে এরকম কাহিনীর ছিটে ফোটাও নেই।
.
→তারা অাবার পাঠাবলী খন্ডের কথা বলেছে,  কিন্তু এটাও তাদের জোচ্চোরি, কারণ কালিকা পুরাণে খন্ড নেই, কালিকা পুরাণ অধ্যায় শ্লোকে বিন্যস্ত। এবং সমগ্র কালিকা পুরাণ ৯৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।
.
→কালিকা পুরাণের ১৩ তম অধ্যায়ের নাম হলো ---- "ধ্যানযোগে মহাদেবের বিশ্বদর্শন"
.
→এই অধ্যায়ের মোট কথা হলো মহাদেব ধ্যানযোগে বিশ্বের যাবতীয় কর্মকান্ড দেখতেছেন।
.
→উক্ত অধ্যায়ে মোট ৫২টি শ্লোক অাছে।
.
→অকালকুষ্মাণ্ডদের দেওয়া কোন কাহিনীর কথা নেই এখানে।
.
→তাই সবার উচিত এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো।

.

→[সকলের অবগতির জন্য কালিকা পুরাণের ১৩নং অধ্যায়টির পুরো স্ক্রীনশট দেওয়া হলো]

Writer & Editor Kanchan Das

বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্থে কি ভিনগ্রহের প্রাণীর কথা বলা হয়েছে?

★সনাতন ধর্মে কি ভিনগ্রহে কোন প্রাণীর কথা বলা হয়েছে???
______________________________________
.
→উত্তর---- হ্যা অবশ্যই সনাতন ধর্মের শাস্ত্রে পৃথিবী ছাড়াও অন্যান্য গ্রহে যে প্রাণের অস্তিত্ব অাছে তা উল্লেখ অাছে। এরুপ অবস্থানের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও সনাতন ধর্মীয় গ্রন্থ একই সূত্রে গাথা।
:
→সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ আছে--- .
→নভো দদাতি শ্বসতাং পদং যন্নিয়মাদদঃ ।
→লোকং স্বদেহং তনুতে মহান্সপ্তভিরাববৃতম্।।
.
(ভাগবত ৩/২৯/৪৩)
.
অনুবাদ
→পরমেশ্বর ভগবানের নিয়ন্ত্রণে আকাশ অন্তরীক্ষে বিভিন্ন গ্রহদের স্থান প্রদান করে, যেইখানে অসংখ্য প্রাণী বাস করে । তাঁহার পরম নিয়ন্ত্রনে সমগ্র ব্রহ্মান্ডের বিরাট শরীর সপ্ত আবরণসহ বিস্তৃত বিশ্বব্রহ্মান্ডের আবরণের ধারণা হয় ।
.
★এ শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে সমগ্র ব্রহ্মান্ডের অসংখ্য গ্রহে অসংখ্য প্রাণী বাস করে এবং বিশ্বব্রহ্মান্ডের ৭ টি আবরণ আছে। সে বিষয়টি উল্লেখ করা হইয়াছে । বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের ৭ টি আবরণ আছে । অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডে অনন্ত কোটি জীব আছে, সে কথা শ্রীমদ্ভাগবত এর উক্ত শ্লোক থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
.
.
Writer & Editor Kanchan Das

বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জন্য দায়ী কে?

→অভিযোগ অারোপ----:
( বিশ্বের সন্ত্রাসের উৎপত্তি হয়েছে হিন্দু ধর্ম থেকে, কারণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধভূমিতে অর্জুনকে ব্রেনওয়াশ করে যুদ্ধ করিয়েছিল কৃষ্ণ, অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল)
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
জবাব
--- বর্তমানে এরুপ প্রশ্ন অহরহ করা হচ্ছে অামাদের সনাতনী ভাই বোনদের মধ্যে। কারণ এই প্রশ্নটা করার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি সনাতন ধর্মকে সন্ত্রাসবাদী ধর্ম হিসেবে অাখ্যায়িত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই অামাদের সকলকে অাগে জানতে হবে ---
→কেনো হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ???
→কে দায়ী ছিল এই যুদ্ধের জন্য???
→কিংবা কেউ কি চাইনি এই যুদ্ধ থামাতে???
:
---প্রথমত অামাদের সবার জানা উচিত কেনো হয়েছিল এই ধ্বংসযজ্ঞ???
:
১) এই যুদ্ধের প্রারম্ভ হয়েছিল সেই কুরুবংশীয় রাজা ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্র জন্মের পর থেকে।
কেননা ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুত্র হচ্ছেন দুর্যোধন। সে সর্বদা চাইতো তাঁর বাবা রাজা সেইজন্য কুরুরাজ্য কেবল দুর্যোধনদের সম্পত্তি হিসেবে তারা দাবি করতো, এবং সেটা তারা ভােগ করতো। অপরদিকে ধৃতরাষ্ট্রের ছোট ভাই পান্ডু বনে চলে যাওয়ার প্রায় ১৩-১৪ পর সে মারা যায়, এবং সে মারা যাওয়ার পর তাঁর পঞ্চপুত্রকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী কুরুরাজ্যের রাজধানী হস্তিনাপুরে ফিরে অাসে। অাসার প্রথম দিনই বাধে বিপত্তি। কেননা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা পঞ্চপাণ্ডবকে রাজ মহলে ঢুকতে দিচ্ছেনা ভিখারী বলে তাদের উপহাস করতে লাগলো অার, বন্য মানুষ বলেও কটাক্ষ করছিলো। মূলত তখন থেকেই শুরু হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রারম্ভ।(Note Reason No 1)
:
২) বন থেকে অাসার পর অনেক কিছু বলার পর তাদের অবশেষে রাজ মহলে ঢুকতে দিলো। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ক্রমশ পঞ্চপুত্রের ওপর অাধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন রকমে পারেনা, কারণ পঞ্চপুত্রের মধ্যে একজন ছিলো অত্যন্ত শক্তিশালী তাঁর নাম ভীম।
সেই ভীমকে বিষ খাইয়ে নদীতে ফেলে দেয় দুর্যোধন এবং তাঁর মামা শকুনী। (Note Reason No 2) সে পর্যায়ে দৈবক্রমে ভীম বেঁচে যায়।
:
৩) ভীম বেঁচে গেলে তাদের ওপর অারো বেশীই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে দুর্যোধনরা। কারণ পঞ্চপাণ্ডবদের যদি মেরে ফেলা যায় তবে পুরো রাজ্যের অধিকর্তা দুর্যোধন তথা কৌরবরা হয়ে যাবে। গুরুকুল থেকে শিক্ষা লাভ করে অাসার পর নতুন উত্তরাধিকার ঘোষণা করা হয় পঞ্চপাণ্ডব এর মধ্যে জৈষ্ট্য যুধিষ্টিরকে। কেননা ধৃতরাষ্ট্র ছিলো অান্তবর্তীকালীন রাজা, তাই যুধিষ্টিরই পরবর্তী রাজা হবেন সেটা এককথায় মান্য। কেননা ধৃতরাষ্ট্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে পান্ডু বনে চলে গিয়েছিল, এবং সেখান থেকে ফিরে অাসার পর অবশ্যই রাজা হবেন পান্ডুর পুত্র। যুধিষ্টির যুবরাজ হওয়ার পর দুর্যোধন তাকে বারণাবতে গিয়ে অবকাশ যাপনের জন্য বলেন। যুধিষ্টির সেখানে তাঁর অপর চার ভাই এবং তাদের মা কুন্তিতে নিয়ে যান। কিন্তু এটা ছিলো নিছক একটা ষড়যন্ত্র। হস্তিনাপুরের বিশ্বস্ত নির্মাণ শিল্পী পুরোচন এর সাথে একটা ষড়যন্ত্র করে, অর্থাৎ সেখানে এমন একটি ঘর বানাবে যা লাক্ষা দিয়ে নির্মিত যাতে করে সহজে জ্বলে যেতে পারে সেই ঘর। এই খানে পঞ্চপান্ডবকে পুড়িয়ে মারার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে দুর্যোধন এবং তাঁর মামা শকুনী। পুড়িয়ে মারার অাগে অারেকটি ষড়যন্ত্র ছিলো তা হলো বিষ খাইয়ে অাগেই মেরে ফেলা। কারণ পঞ্চপান্ডবরা ছিলো বীর যোদ্ধা, অাগুন নিভানোর যথেষ্ট পথ ছিলো তাদের। পুড়িয়ে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রও কৌরবদের কুকর্মের একটা (Note Reason No 3)
:
৪) বারণাবত থেকে কোন রকমে বেচে যায় পান্ডবরা। এরপর অনেক ঘটনার পর দ্রোপদীর সঙ্গে পান্ডবদের বিবাহের পর হস্তিনাপুরে ফিরে অাসে পান্ডবরা, কারণ সেটা তাদের বাড়ী। কিন্তু তখনও তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। অবশেষে ভীষ্মের মধ্যস্থতায় কুরু রাজ্যকে দুভাগ করে সাপদের এলাকা পান্ডবদের দেয়া হয়। তাদের থেকে সেটা কেড়ে নেওয়ার জন্য অারেকটা ষড়যন্ত্র করে দুর্যোধনরা, তারা হস্তিনাপুরে পান্ডবদের অামন্ত্রণ করে পাশা খেলবার জন্য, সেখানে কুচক্রী চাল চেলে পান্ডবদের থেকে সব কিছু কেড়ে নেয় দুর্যোধনরা, এখানে অারেকটি ঘৃণ্য কর্ম হচ্ছে একটা রাজসভায় একজন নারীকে উলঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল পাপিষ্ট দুর্যোধনরা। (Note Reason No 4)
:
৫) পাশা খেলার পর পান্ডবদের ১২ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল, অার একবছর অজ্ঞাত বাস করেছিল। কথা হয়েছিল তারা ফিরে অাসলে তাদের সম্পত্তি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। এখানে অাবার অারেকটি ঘটনা ঘটে তাহলো বনে বাস করার সময় দ্রোপদীকে অপহরণ করার চেষ্টা করেছিলো দুর্যোধন এর বোনের জামাতা জয়দ্রথ। কিন্তু পান্ডবদের বীরত্বে তা হয়নি। তারপর কথামতো পান্ডবরা দীর্ঘ ১৩ বছর পর ফিরে অাসলে তাদের সম্পত্তি তাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় দুর্যোধনরা। (Note Reason No 5)
:
৬) এই সময় পান্ডবদের অাশ্রয় দেয় দ্বারকার রাজা দয়াময় শ্রীকৃষ্ণ, তিনি পান্ডবদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন যাতে সকলের মঙ্গল হয়। শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের হয়ে হস্তিনাপুরে যান শান্তিদূত হিসেবে। অর্থাৎ মিমাংসা করার জন্য। প্রস্তাব দেয়া হয় পাঁচ পুত্রের জন্য কেবল পাঁচটি গ্রাম দেওয়ার জন্য। অার কিছু দিতে হবেনা। তাতেও রাজি হয়নি দুর্যোধনরা, পৃথিবীর অন্যতম ঘৃণ্য ব্যক্তি দুর্যোধন বলেছিলো "বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সুচাগ্র মেদিনী" অর্থাৎ যুদ্ধ ছাড়া সুচের অগ্র ভাগে যেটুকু মাটি অাছে তাও দেবেনা। তারপর শান্তি দূত হিসেবে যাওয়া শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে। অার শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করার চেষ্টা করে। তখনই শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুরে বলে অাসে মহা ধ্বংষলীলা অাগত, ভীষ্ম দ্রোণ অার কর্ণকে বলে অাসলো দুর্যোধনকে বুঝাতে যে সে যা করছে তা জগতের পক্ষে অকল্যান বয়ে অানবে। (Note Reason No 6)
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
উপরের কারণগুলো ছাড়াও অারো অসংখ্য কারণ অাছে তা বলে শেষ করা যাবেনা।
:
:
এবার দ্বিতীয় টপিক---- "কে দায়ী এই মহাযুদ্ধের জন্য?"
:
কারণ গুলো দেখলে স্পষ্টা বুঝতে পারা যায় যে কৌরবরা যুদ্ধের জন্য দায়ী। কারণ তাঁরা ছিলো দুরাচারী, পাষন্ড অার অধার্মিক। তাদের রাজ্যের প্রতি লোভ অার মোহ এই যুদ্ধের অন্যতম বড়ো কারণ।
_________________________________________________
-----তৃতীয় জিজ্ঞাসা তা হলো "কেউ কি চায়নি যুদ্ধ থামাতে?"
:
হ্যা চেয়েছিল যুদ্ধ থামাতে তিনি হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
:
১) শান্তি প্রস্তাব নিয়ে তিনিই গিয়েছিলেন হস্তিনাপুরে। যুদ্ধ যাতে না হয় সেজন্য তিনি পান্ডবদের জন্য ৫টি গ্রাম চান। এর থেকে ভালো উদাহরণ অার কি হতে পারে যুদ্ধ থামানোর????
:
২) তারপর অাবার যুদ্ধ থামাতে দুর্যোধনের সাথে অাত্মীয় করে শ্রীকৃষ্ণ। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের সন্তান শাম্বের সাথে দুর্যোধনের কন্যা লক্ষণার সাথে বিয়ে দেন। যাতে মেয়ের দিক থেকে যাতে দুর্যোধন ভেবে দেখে। কিন্তু না তাতেও দুর্যোধন সমঝোতায় অাসতে নারাজ।
______________________________________________
:
এবার অাপনারাই বলুন যুদ্ধের জন্য কে দায়ী পঞ্চপান্ডবরা নাকি শ্রীকৃষ্ণ নাকি পাপিষ্ট দুর্যোধনরা?????
:
তাই পরিশেষে বলতেই হয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিলো দীর্ঘ পাপের ফল।।
:
:
Writer & Editor Kanchan Das

রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭

চরিত্রাহীনা নারী সম্পর্কে সনাতন শাস্ত্রের বিধান

অাজকাল অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে।

হ্যা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার অধিকার সকল মানবজাতির অাছে, হোক তিনি সনাতন,ইসলাম,বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান।
কেননা সনাতন ধর্ম সবাইকে বলে "মানুষ হতে,এবং অপরকেও মানুষ রুপে গড়ে তুলতে "

এই লিখাটা নারী জাতিকে হেয় করার জন্য নয়, কেবল নারী জাতির মধ্যে যারা কুকর্মে লিপ্ত তাদের জন্য।

কারণ অামাদের মনে সর্বদা প্রশ্ন থাকে যে সনাতন ধর্মে কি বিবাহের পর বর-কন্যা কাউকে কেউ পরিত্যাগ করতে পারে?
কিংবা পারলে বা কেমন করে?
কিংবা কেনো পারবেনা?

প্রথমত কথা হলো অামার স্ত্রী যদি দুশ্চরিত্রা হয় তবে তাঁর সঙ্গে কি অামার সম্পর্ক রাখতে হবে নাকি সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে?

এটা সহজেই বলা যায় যে কারো স্ত্রী যদি পরকিয়া কিংবা চরিত্রাহীন হয় তবে সেই চরিত্র হীন নারীর সাথে সংসার করাটা মোটেও সম্ভব না।

যেকোন কিবেকবান মানুষের প্রশ্ন যে সনাতন ধর্ম কি এমন প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে যে "চরিত্রাহীন নারীর সাথে কি বিচ্ছেদ হতে পারে??"

হ্যা বিবেকবান ব্যক্তি এই প্রশ্নের সমাধান সনাতন ধর্ম দিতে পারে।

দেখে নেয়া যাক সনাতন ধর্ম কি বলে এই বিষয় সম্পর্কে?

স্মৃতিশাস্ত্র পরাশর সংহিতা ১০/৩০
→জারেণ জনয়েদ্গর্ভং গতে ত্যক্তে মৃতে পতৌ।
→তাং ত্যজেদপরে রাষ্ট্রে পতিতাং পাপকারীণীম্।।

*বঙ্গানুবাদ*
"পতি বিদেশ গমন করিলে, কিংবা পতিকে পরিত্যাগ করিয়া অথবা পতির মৃত্যুর পর অন্যের সংযোগে যে রমণী গর্ভধারণ করে সেই পতিতা পাপকারিণীকে পর রাজ্যে পরিবর্জ্জন করিবে।

*ব্যাখা*
উক্ত শ্লোক দেখলে সহজে বুঝা যাচ্ছে যে যে নারী স্বামী ছেড়ে পর পুরুষের সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয় তাঁকে এক কথায় বলা হচ্ছে পতিতা। সেই চরিত্রাহীনা নারীকে পরদেশে কিংবা অন্য স্থানে নির্বাসিত করার কথা বলা হচ্ছে।

এর ঠিক পরের শ্লোকে অর্থাৎ পরাশর সংহিতা ১০/৩১
→ব্রাহ্মণী তু যদা গচ্ছে্ৎ পরপুংসা সমন্বিতা।
→সা তু নষ্টা বিনির্দ্দিষ্টা ন তস্যাহমনং পুনঃ।।

*বঙ্গানুবাদ*
"কোন ব্রাহ্মণী(নারী) যদি পর পুরুষের সহিত চলিয়া যায়, তবে তাহাকে নষ্টা বলে, পুনর্ব্বার তাহার গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন হইতে পারে না।"

*ব্যাখ্যা"
উক্ত শ্লোক অনুসারে দেখা যাচ্ছে --যে নারী পরপুরুষের সাথে চলে যায় তাকে বলা হচ্ছে নষ্টা। এবং তাঁকে পুনরায় বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ার জন্য শাস্ত্র নির্দেশ দিচ্ছে।

উক্ত দুইটা শ্লোক দেখলে স্পষ্ট অনুমেয় যে চরিত্রাহীনা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথায় বলা হচ্ছে। 

এবার অনেকেই বলবেন সনাতন ধর্মে বিবাহ সাত জন্মের বন্ধন।

কিন্তু অাপনাদের এও মনে রাখা উচিত যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকলে সাত জন্ম কেনো সাত হাজার জন্মের বন্ধন হতে পারে।

(ভূলক্রটি মার্জনীয়)

Writer & Editor Kanchan Das

রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭

পরমেশ্বরের পা থেকে শূদ্র শ্রেণীর জন্ম নিয়ে বিভ্রান্তির জবাব

ইদানিং দেখা যায় বেশ কিছু ব্যক্তি নিজেদের সব্বোশ্রেষ্ট বলে বেড়ায়, তারা অারো বলে এনারাই সনাতন ধর্মে  অন্য সকলের থেকেও উচু। বাকীরা নিচে। কারণটা এক সেটা হলো পবিত্র বেদের একটা মন্ত্র, যদিওবা পবিত্র বেদমন্ত্রটি ঠিক কি নির্দেশ করেছে তা অামাদের জ্ঞানের পরিসীমার বাইরে। অার অামাদের পার্শ্ববর্তী মুমিনরাও মন্ত্রটাকে নিয়ে সনাতন ধর্মকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে দ্বিধা করেনা। তাদের জ্ঞাতার্থে এটা অানতে হলো।
উক্ত মন্ত্রটা নিম্নরুপ-----
:
-----ব্রাহ্মণোহস্য মুখমাসীৎ
বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ।
-----ঊরূ তদস্য যদ্বৈশ্যঃ
পদ্ভ্যাং শূদ্রো অজায়ত।।
:
★অনুবাদ- ব্রহ্মপুরুষের মুখ হতে ব্রাহ্মণ, বাহু হতে ক্ষত্রিয়, ঊরু হতে বৈশ্য এবং পা থেকে শূদ্রের উৎপত্তি। :
★(ঋগ্বেদ ১০/৯০/১২)
:
:
বিচার
:
-------নিজেদের দেবসন্তান বা বীর সন্তান কল্পনা করবার আগে একটু সুস্থভাবে এবং স্বাভাবিক ভেবে দেখুন। দেহের পক্ষে চতুর্বিধ অঙ্গ সমানভাবে অপরিহার্য্য। দেহের স্বাস্থ্য এবং শক্তি ( ধী,বাহু,ধারণ,চলৎ) বড় কথা, আমাদের মাথা বড়, না পা বড়- এটি মূর্খদের ছেলেমানুষি তর্ক মাত্র।
.
আবার দেহের পক্ষে যা সত্যি, সমাজদেহের পক্ষেও তা-ই সত্যি।যে কোনও সমাজব্যবস্থা বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে চলতে হলে ধীশক্তি,বাহুশক্তি,ধারণশক্তি এবং চলৎশক্তি সমানভাবে প্রয়োজন।
.
এই চতুর্বিধ শক্তির বাস্তব প্রতিনিধিদের নাম হল ব্রহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, শূদ্র। আমার পা যদি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলে, সেক্ষেত্রে আমার বিশাল মস্তিষ্ক অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাবে তখন আমার মস্তিষ্ক প্রসূত হাজারো বুদ্ধি কি-ভাবে বাস্তবায়িত হবে?
আমার দুই হাত যদি বাইরের বাধাবিপত্তি সরিয়ে দিতে না- পারে, তখন আমার মস্তিষ্কের উর্বরতা বা পায়ের সচলতা কি কাজে, কিভাবে লাগবে?
:
গুণ ও কর্মের এই বিভাগ অবশ্যম্ভাবী এবং অপরিহার্য্য।এই অনুযায়ী আমাদের চার বর্ণের অবস্থিতি। কিন্তু পরবর্তীকালে বংশানুক্রমিক জাতিভেদের প্রথার যে উৎপত্তি হল তা এই গুণকর্ম বিভাগেরই বিকৃত রূপ মাত্র।প্রত্যেক সমাজ এবং কর্ম ব্যবস্থায় গুণকর্মের এই বিভাগ শাশ্বত এবং সনাতন, তবুও জাতিভেদপ্রথা হল স্বার্থপর ধর্মব্যবসায়ী মানুষের তৈরী এবং যা নিয়ে মানুষে মানুষে চিরকাল বিবাদ হানাহানি হয়েছে এবং হবে।
:
গুণকর্মের এই বিভাগ এই বেদমন্ত্রে আমরা প্রত্যক্ষ করি, আর যারা এই মন্ত্রের মধ্যে জাতিভেদ প্রথার সূত্রপাত অবিষ্কার করেন, তারা এই মন্ত্রের অপব্যাখ্যা করেন মাত্র।
:
চরম অনুতাপের বিষয় এই যে, এই ভার্চুয়াল ফেসবুকের জগতেও কিছু কিছু হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষ প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে বর্ণ, সম্প্রদায়, জাত নিয়ে সারমেয়দের মত কামড়াকামড়ি করতে তৎপর, যদিও তাদের নিজেদেরও অস্তিত্ব ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে,তবুও তারা কামড়াকামড়ি থেকে বিরত থাকছেনা, কারণ তার নিজেদের বৈদিক হিন্দু না মনে করে অন্য কিছু ভাবতে বেশী পছন্দ করেন।
হিন্দু ঐক্যের কথা চিন্তা করে সকল হিন্দুদের কাছে অনুরোধ এদের থেকে তফাৎ থাকুন।
:
যেখানে অামাদের অস্তিত্ব বিপন্ন সেখানে অাছি জাতপাত নিয়ে।

>>>>> Kanchan Das<<<<<

শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭

ধর্ম পালন করতে গিয়ে সমালোচিত হবে না


সাধু সাবধান! ধর্ম পালন করতে গিয়ে সমালোচিত হবেন না। কোনটি উচিত আর কোনটি অনুচিত সেগুলো ধর্ম পালনের পূর্বে চিন্তা করুন। নিজে সতর্ক হয়ে অন্যকে সতর্ক করুন।

মাঝে মাঝে কয়েকটি বিষয়ে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হই ।
আমরা জানি যে অধিকাংশ হিন্দু পাড়া গুলোতে সাপ্তাহিক হরিসভার আয়োজন করা হয়। যেখানে সন্ধ্যা আরতি থেকে শুরু করে গুরুর গান, গৌর আরতি, দেহতত্ত্ব, পঞ্চতত্ত্ব, ভক্তিগীতি, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও ভাগবত পাঠ সহ ভিবিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমি আমার নিজ এলাকা সহ বেশকিছু এলাকায় খেয়াল করি যে হরিসভার মধ্যবর্তী সময়ে মুড়ি, চানাচুর , চা, পান ইত্যাদির জল খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে উপস্থিত ভক্ত বৃন্দদের জন্য।

উক্ত খাবার গুলো খাওয়া শেষে আবার তারা হরিসভা শুরু করে। হরিসভা বলুন আর গোবিন্দের সেবা বলুন আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ভক্তি সহকারে গোবিন্দের সেবা করা এবং ঠাকুর ঘরে যদি অন্যান্য দেব-দেবী থাকে তাদের সাথে গুরু সেবা দেওয়া। পাশাপাশি কিছু ভক্তিমূলক গান, হরিনাম সংকীর্তন, গীতা পাঠ সহ ধর্মীয় ও ভক্তিমূলক আলোচনা করা এবং পূজার শেষ প্রসাদ নেওয়া।
.
এখন প্রশ্ন হলো মাঝখানে চা, মুড়ি, চানাচুর, এমনকি পান সিগারেট দিয়ে যে জলখাবারে পর্ব আয়োজন করা হয় তাকে কি আপনি ধর্ম পালন ব্যবস্থার নিয়ম হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন নাকি নিয়মের বাহিরের কর্ম কান্ডে স্বীকার করবেন ??

আমাদের ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে খাবারের উচ্ছিষ্ট বলে একটা কথা প্রায় শুনা যায়। হরিসভার মাঝখানে এইসব মুড়ি, চানাচুর, চা, পান খেয়ে একই জায়গায় বসে মৃদঙ্গ, করতাল, কাসা, জুড়ি ও হারমুনিয়াম দিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করা ও ধর্মীয় আলোচনার মধ্যে কতটুকু শুদ্ধতা বজায় থাকে তা আপনারই ভাল বলতে পারেন।
:
পরের বিষয়টি পড়ার পর বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কিছু নামধারী বৈষ্ণব আমাকে গালমন্দ করতে এক মিনিটও সময় নিবে না। কিন্তু তাতে কি? সঠিক নিয়মে আসার জন্য ভুলকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। মহোৎসবে গোবিন্দ, জগন্নাথের ভোগের শেষে যে প্রসাদ ভক্তদের মাঝে বিতরন করা হয় তাই মহাপ্রসাদ। আচ্ছা, ধরুন অদ্য দিবসে আপনার বাড়িতে মহোৎসব, এক হাজার ভক্তের জন্য প্রসাদ তৈরি করতেছে পাঁচ থেকে ছয় জন বৈষ্ণব। আপনার হঠাৎ চোখে পড়লো কয়েকজন বৈষ্ণব মহাপ্রসাদ রান্নার চলাকালীন সময়ে মুখে পান সুপারি দিয়ে বেশ চিবাচ্ছে অথবা চা কিংবা কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে প্রশান্তি নিচ্ছে। সত্যি করে বলুনতো বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখবেন?

নামধারী ঐসব বৈষ্ণবরা কি শুদ্ধতা ও সঠিক নিয়মকানুন মেনে মহাপ্রসাদ রান্না করতেছে ? নাকি শুধু ভোগের জন্য আলাদা করে পরিমাণ মতো তৈরি করে ভক্তদের জন্য চিরাচরিতভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধতা ও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে দায়িত্ব পালন করতেছে। আমি মনে করি এসবের জন্য শুধু নামধারী
বৈষ্ণবদের দোষারপ না করে নিজদেরকে (আয়োজনকারী) সচেতন হতে হবে। তাহলেই এই সীমাবদ্ধতা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা। আর তা না হলে ধর্ম পালন করতে গিয়ে এই ধরনের ভুল ত্রুটি বংশ পরম্পরাক্রম যেইভাবে চলে আসতেছে সেইভাবে ভবিষৎ প্রজন্মে চলতে থাকবে।

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...