জুয়ার নেশায় উন্মত্ত হয়ে অনেকে তাদের ধনসম্পদ, ঘরবাড়ী হারিয়েছে; এমন কি সাধ্বী স্ত্রীদেরও পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। যে পাশা খেলে কেউ তাকে কোন কিছু ঋণ দেয় না, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী সকলের তাকে ঘৃণা করে, এমন কি তার পক্ষে নিজ গৃহে রাত্রিযাপনও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের সমগ্র চৌত্রিশ সূক্তটি পাশা খেলা ও তার ভয়াবহ ফলশ্রুতির বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এখানে তার প্রয়োজনীয় অংশ তুলে দেওয়া হলঃ
‘আমার এ রূপবতী পত্নী কখনো আমার প্রতি বিরাগ প্রদর্শন করেনি … কিন্তু কেবলমাত্র পাশার অনুরোধে আমি সে পরম অনুরাগিনী ভার্যাকে ত্যাগ করলাম’ (১০।৩৪।১)।
যে ব্যক্তি পাশা ক্রীড়া করে তার শ্বশ্রু তার উপর বিরক্ত, স্ত্রী তাকে ত্যাগ করে, যদি কারো কাছে কিছু যাঙ্ঞা করে, দেবার লোক কেউ নেই। যেরূপ বৃদ্ধ ঘোটককে কেউ মূল্য দিয়ে ক্রয় করে না, সেরূপ দ্যুতকার কারও নিকট সমাদর পায় না’ (১০।৩৪।৩)।
‘পাশার আকর্ষণ বিষম কঠিন, যদি কারও ধনের প্রতি পাশার লোভদৃষ্টি পতিত হয়, তাহলে তার পত্নীকে স্পর্শ করে। তার পিতামাতা, ভ্রাতাগণ তাকে দেখে বলে আমরা একে চিনি না, একে বেঁধে নিয়ে যাও’ (১০।৩৪।৪)।
পাশার এই ভয়াবহ পরিণতির কথা জেনে ও স্বচক্ষে দেখেও মানুষ পাশার লোভ সংবরণ করতে পারে না। প্রথম প্রথম সে পাশার সঙ্গীদের পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করে কিন্তু ছকের ওপর পাশার পিঙ্গল গুটিগুলিকে বসে থাকতে দেখে তার সব সংকল্প ভেসে যায়। ফলে
‘ভ্রষ্টা নারী যেরূপ উপপতির নিকট গমন করে, আমিও তদ্রুপ খেলার সঙ্গীদের ভবনে গমন করি’ (১০।৩৪।৫)।
সুতরাং তার
‘স্ত্রী দীনহীন বেশে পরিতাপ করে, পুত্র কোথায় বেড়াচ্ছে ভেবে তার মা ব্যাকুল। যে তাকে ধার দেয়, সে আপন ধন ফিরে পাবে কি না এ ভেবে সশঙ্কিত। দ্যুতকারকে পরের বাড়ীতে রাত্রিযাপন করতে হয়’ (১০।৩৪।১০)।
কেবল তাই নয়
‘আপন স্ত্রীর দশা দেখে দ্যুতকারের হৃদয় বিদীর্ণ হয়, অন্যান্য ব্যক্তির স্ত্রী সৌভাগ্য ও সুন্দর অট্টালিকা দেখে তার পরিতাপ হয়। সে হয়তো প্রাতে শ্রীঘোটক যোজনাপূর্বক গতিবিধি করেছে, কিন্তু সন্ধ্যার সময় নীচলোকের ন্যায় তাকে শীত নিবারণের জন্য অগ্নি সেবা করতে হয়’ (১০।৩৪।১১)।
অর্থাৎ ‘সকালবেলা আমীর ভাই, আর ফকির সন্ধ্যাবেলা।’
তাই ঋষি সকল পাশা খেলোয়াড়দের প্রতি উপদেশ দিচ্ছেনঃ
কখনও জুয়া খেলবে না, পরিশ্রমলব্ধ সম্পদ ভোগ কর ও পরিতৃপ্ত থাক, পরিশ্রমলব্ধ সম্পদই সত্যিকারের সুখ দিতে পারে। ঋকবেদ, ১০/৩৪/১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন