রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭

বৈদিক সাহিত্যে গো-রক্ষা নাকি গো-হত্যা???

📀কয়েকদিন আগে এক চ্যালা তার নাম Md Sazzad Hissain সে সকল হিন্দুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে যে হিন্দুধর্মে নাকি গরু খাওয়ার বিধান আছে। আরো বলেছে কেউ আছেন যে দেখাতে পারবেন হিন্দু শাস্ত্রে গরু খাওয়া নিষেদ???
.
➡আগে আমরা জানবো সংস্কৃত অভিধানে "গো" নামক শব্দটার কয়টি অর্থ আছে?
.
⭕গরু হলো চতুষ্পদ দুগ্ধপ্রদান কারী পশু। কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যে গো এর অনেক অর্থ হয় এবং সকল প্রকার অর্থই সাহিত্যে এবং সমাজের সূলভ ব্যবহার পাওয়া যায়। হলযুধ সংস্কৃত কোষে একটি শ্লোকে পাওয়া যায়👇👇
➡দিগদৃষ্টি দীধিতস্বর্গব্রজ্য বাগ্বানবারিষু।
➡ভূমৌ পশৌ চ গো শব্দো বিদ্ধদ্ধির্দশসু।।
⭕হলা-০,অভিধান-০,কান্ড- ৫-৬⭕
.
💟অনুবাদ-- বিদ্ধানগণ গো শব্দের দশ প্রকার অর্থ করেন।
1⃣দিশা
2⃣দৃষ্টি
3⃣দীধিতি= কিরণ
4⃣স্বর্গ
5⃣বজ্র
6⃣বাক্= বাণী
7⃣বাণ=তীর
8⃣বারি=জল
9⃣ভূমি
1⃣0⃣পশু= গরু নামক পশু।
.
তাই যেখানে "গো" শব্দটা দেখবা মনে করবানা সেটা গরু।
যদি মনে করো সেটা গরু তবে মনে করবা নিজেই একটা গরু বুঝলা
➡➡➡➡➡⬅⬅⬅⬅⬅
⭕এবার দেখবো অবস্থানভেদে "গো" শব্দটার প্রয়োগ--
⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇⬇
.
গোমেধ যজ্ঞে বাক=বাণী, ভূমি= পৃথিবীর পরম্পরা অনুযায়ী প্রয়োগ পাওয়া যায়। অন্য প্রয়োগ ও হতে পারে।
গৌ-এর এই অর্থ বৈদিক কোষ "নিঘন্টু" দ্বারা সমর্থিত। যাস্কাচার্য নিঘন্টুর ব্যাখ্যা তিনি তার নিরুক্তে লিখেছেন---
1⃣গৌ ইতি পৃথিব্যা নামধেয়ম্
ক)যদ্ দুরংগতা ভবতি; পৃথিবী দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তাই গৌ (পৃথু বিস্তারে)
খ) যচ্চ অস্যাং ভূতানি গচ্ছতি- এর উপর অরূঢ় হয়ে প্রাণী অনেকদিন পর্যন্ত গমন করে।
.
2⃣শাস্ত্রে বানীর ভেদ চার প্রকার,, যথা--
১)পরা
২)পশ্যন্তি
৩)মধ্যমা
৪)বৈখরী
এর মধ্যে মধ্যমা বানীর নাম হলো "গৌ"
👉"গৌ" মাধ্যমিকা বানী।
👉গৌ এতস্যা মাধ্যমিকায় বাচঃ
👉গৌ বাগেষু মাধ্যমিকা
(অ ০৬)
(অ ১১,খ ৪৩)
.
➡ সুতরাং আমরা গৌ এর দুইটি অর্থ আমরা গ্রহণ করছি-
1⃣গো= পৃথিবী, 2⃣গো=বানী।
.
গোমেধ এর "গো" বিশ্লেষণ হলো এবার "মেধ" এর বিশ্লেষণ ↙↙
.
⭕মেধ-- মেধ এর তিন প্রকার অর্থ ধাতুপাঠ দ্বারা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।
1⃣মেধ থেকে মেধা,মেধাবিন্ "যাং মেধা দেবগণাং পিতরশ্চোপাসতে,, এই স্থানে মেধা= বুদ্ধি জ্ঞান ইত্যাদি।
2⃣মেধের সংগমন,সমন্বয়, সংগতিকরন আদি অর্থও হয়।
3⃣মেধের অর্থ হিংসাও হয় তবে এর অর্থ বিরল। হিংসা অর্থে প্রয়োগ অত্যন্ত কম।
.
⭕ এবার যজ্ঞ শব্দটার বিশ্লেষণ↙↙↙
.
👉যজ্ঞ শব্দ যজ্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। এরও তিনটি অর্থ আছে।
1⃣দেবী পূজা (পূজান্নাম সৎকার(
2⃣সংগতিকরন অর্থাৎ কোন বস্তুর সমন্বয়, সংস্কার আর সসামঞ্জস্য দ্বারা তাকে অধিক উপযোগী করা।
3⃣দান করা।
.

👉শতপথ ব্রাহ্মনে উল্লেখ আছে --
"অন্নং হি গৌ"
তাহলে এখন গো +মেধ+যজ্ঞ এই তিন শব্দ একত্রিত করলে ক্লিয়ার গোমেধ শব্দের আসল অর্থ হলো -- পৃথিবীকে উর্বর করে অন্ন উৎপন্ন করা হলো গোমেধ যজ্ঞ।
.
👉পবিত্র বেদে যাওয়ার আগে মহাভারত থেকে একটা প্রসঙ্গ টানি কেমন---
➡সুরা মৎস্যা মধু মাংসমাসবং কৃশরৌদনম্।
➡ধূর্তৈ প্রবর্তিতং যজ্ঞে নৈতদ বেদেষু বিদ্যতে।।
(মহাঃ শান্তিপর্ব-- ২৬৫/৫)
.
➡অনুবাদ-- মদ,মাংস, মৎস ইত্যাদি যজ্ঞে প্রদান করার প্রচলন ধূর্তদের প্রচার, এই প্রকার বিধান বেদে কোথাও নেই।
.
উপরিউক্ত তথ্য থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম যজ্ঞে পশু দেওয়ার বিধান কেবল ধূর্তদের কাজ।
.
ধূর্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দ্বাপর যুগের অাসুরিক ভাবসম্পন্ন কংস।
আমরা শ্রীমদ্ভাগবত এর ১০/৪/৪০ দেখতে পাই কংসের একজন বিশ্বস্ত সহচর তাকে বলতেছে যজ্ঞের জন্য দুগ্ধপ্রদানকারী গাভী গুলো যেন হত্যা করা হয়।
.
আর আমরা রামায়নের অযোধ্যা কান্ডে দেখতে পাই রাক্ষসরা যজ্ঞে  বিভিন্ন ধরনের মাংস, রক্ত আর হাড় ফেলে যজ্ঞকে পন্ড করেছিল।
রাম লক্ষণ রাক্ষসদের পরাজিত করে, মুনিরা আবার যজ্ঞ শুরু করেন।
.
এখন সেই সমস্ত মডারেট ব্যক্তিদের বলতেছি---
যজ্ঞে যদি পশুবলি থাকতো তবে কেনো মাংস রক্ত হাড় যজ্ঞে ফেলে রাক্ষসরা কেনো সেটা পন্ড করতো???
কেনই বা এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রানের জন্য বশিষ্ঠ মুনি রাম লক্ষনকে নিয়ে গেলো???
বিবেককে প্রশ্ন করুন।
.

➡এবার আসলাম সেই টপিকে পবিত্র বেদ মাতার আশ্রয়ে।
সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত বেদবানী যা কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা বোকামী।
বেদে গরু রক্ষার কথা বলা হয়েছে নাকি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে????
.
➡বেদে গাভীকে শ্রদ্ধা সহকারে পালন ও সংরক্ষণ করার বিধান আছে।
.
➡মাতা রুদ্রাণাং বসুনাং দুহিতা স্সসাদিত্যানামমৃতস্য নাভিঃ।
➡প্রনুবোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট।।
(ঋগবেদ -- ৮.১০১.১৫)
.
➡অনুবাদ- গাভী রুদ্রব্রহ্মচারী বিদ্বানগণের মাতা, নির্মাতা।  দুষ্টের রোদনকর্তা বিদ্বান,সৈনিক সেনাপতি ইত্যাদি গাভীকে মাতৃতূল্য পূজনীয়া বলে মনে করেন। গাভী বসু বিদ্ধানগণের পুত্রী। সমাজের সংস্থাপক ও ব্যবস্থাপক প্রবন্ধক আদির জন্য গাভী পুত্রীসম পালনীয়,রক্ষনীয়া রুপে স্বীকৃত।  গাভী অমৃতের নাভি অমৃতের কেন্দ্র। গোরক্ষার দ্বারা চিরজীবন সমাজচেতনা লাভ হয়। বেদ বিচারশীল চিন্তাশীল পুরুষগনকে আদেশ প্রদান করে যে গো নির্দোষ,নিষ্পাপ,অদিতি, অখন্ডনীয়(টুকরো নয় এমন) অবধ্য(হত্যা নয় এমন) সুতরাং তাকে হত্যা করোনা।
.
⭕এবার অন্য আরেকটা মন্ত্র দেখি--
➡ইমং সাহস্রং শতধারমূৎসং ব্যচ্যমানং সরিরস্যমধ্যে।
➡ঘৃতং দুহানামদিতিং জনাযাগ্রে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্।।
(যজুর্বেদ- ১৩/৪৯)
.
➡অনুবাদ- হে পরোপকারী রাজন্ গাভী মানুষের অসংখ্য সুখের সাধন। দুগ্ধের জন্য বিভিন্ন ভাবে পালনীয়। গো ঘৃত দুগ্ধ ধাতৃ।, অদিতি অখন্ডনীয় হে মানব একে হত্যা করোনা। অর্থাৎ কেউ যেন গো হত্যা না করে।
.
⭕অথর্বেদেও গো-জাতির আপন ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে---
.
➡ অন্যোন্যমভিহর্যৎ বৎসংজাতমিবাঘ্ন্যা।।
(অথর্ববেদ-- ৩/৩০/১)
.
➡এটি একটি সামাজিক কর্তব্যের উপদেশ--
"হে মনুষ্যগণ, পরস্পর একে অপরকে এমন ভাবে স্নেহ কর,ভালোবাসো যেমনভাবে অহনতব্য গাভী আপন বাছুরকে ভালোবাসে।
.
💟এবার আবার মহাভারতে আলোকপাত করি---
➡অঘ্ন্যা ইতি গাবাং নাম ক এতোহস্ত্তমর্হতি।
➡মহচ্চকারাকুশলং, বৃষং বা লভেত যঃ।।
(শান্তিপর্ব ২৬২/৪৭)
.
➡অনুবাদ-- গাভীর অপর নাম অঘ্ন্যা, এরা অবধ্য।
.
অথর্বেদের একটা মন্ত্রে উল্লেখ আছে--
➡যদি নো হো হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।
➡তস্তবা সীসেন বিদ্যোমে যথা নোহসি অবীরহা।।
(অথর্ববেদ ১/১৬/৪)
.
➡অনুবাদ-- যদি তুমি আমাদের গাভীসকল হত্যা করো, যদি আমাদের ঘোড়া এবং পুরুষসকল হত্যা কর, তাহলে তোমাকে সীসের গুলি দ্বারা হত্যা করা হবে। যাতে তুমি আমাদের আর কোন ক্ষতিসাধন করতে না পারো।
.
👉👉এতো গুলো প্রমাণের পর কিছু ছ্যাচড়া টাইপের লোক আমার দিকে অাঙ্গুল তুলবে,আর বলবে---
কাঞ্চন বাবু আপনি যতোগুলি প্রমাণ দিলেন সেখানে তো শুধু গাভী রক্ষার কথা আছে। বাকী বাছুর,বৃষ এদের তো হত্যা করা যাবে না এরকম প্রমাণ তো নেই?
.
👉😃😃😃দাড়ান আগে হাইসা লই খিক খিক খিক খিক।।
.
☀ওহে মদন আমারে এতো বোকা পাইছো যে তোমার এই যুক্তিটা ভাঙ্গতে পারুমনা???
কি ভাবছো তুমি আমারে আটকায় দিলা।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে দিলা???
কচু করছো তুমি কচু।
.
➡লন তোমার সেই যুক্তির পাল্টাঘাত 👉👉👉👉
.
➡ অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং
বধীঃ।
(অথর্ববেদ ১০.১.২৯)
.
➡অনুবাদ-নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ।
কখনো মানুষ,গো-অশ্বাদিদের হত্যা করোনা।
.
এখানো গো বলতে গরু জাতিকেই বোঝানো হয়েছে।
আর নিশ্চয় বাছুর আর বৃষ গরু জাতির মধ্যে পড়ে তাই নয় কি???
.
এতোগুলো প্রমাণ তো একত্রিত করা হলো। আরো অনেক প্রমাণ করা সম্ভব যে বৈদিক সাহিত্যে গোরক্ষার কথা বলে গো হত্যার কথা বলেনা।  বরং গো হত্যাকারীদের শাস্তির বিধান আছে।
.
Writer and Editor Kanchan Das

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??

✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...