যজ্ঞ হচ্ছে মহৎ উদ্দেশ্যে সাধিত শুভ কর্ম। যেখানে
বলি দেয়া হয় নিজের দাম্ভিকতা, স্বার্থপরতা এবং পাশবিকতাকে।
যজ্ঞের দর্শন আমাদের শেখায় সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠাকে
এবং তুলে ধরে এমন জীবন ব্যবস্থাকে যেখানে
মানবীয় গুণাবলীকে রক্ষা ও এর আদর্শ সমাজে প্রচারিত
করা হয়। এরকম কিছু যজ্ঞ হচ্ছে সেবা যজ্ঞ- যেখানে
সমাজ সেবাই সকলের ব্রত, জ্ঞান যজ্ঞ- মানবসমাজে
জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রজ্বলনের ব্রত, প্রাণ যজ্ঞ-
যেখানে জীবের প্রাণ রক্ষাই আমাদের ব্রত।
সত্যি করে বলতে আমরা জেনে না জেনে অনেক
যজ্ঞই করছি মনের অগোচরে।
সাধারণত যজ্ঞ বলতে আমরা বুঝি একটি কুণ্ডে আগুন
জ্বালিয়ে মন্ত্র পাঠ করে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য আহুতি দেয়া।
বৈদিক ধর্মে এমনি নিত্য আচরিত একটি যজ্ঞ হচ্ছে হবন বা
অগ্নিহোত্র।অনেক বস্তুবাদীই প্রশ্ন করতে পারেন
অগ্নিহোত্র কি অর্থহীন আড়ম্বর নয়? মোটেও নয়, বরং
এর মাঝে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়।
আমাদের এ জগতে শক্তির মধ্যে তাপ শক্তি ও শব্দ শক্তি
অন্যতম। যজ্ঞে এই দুই শক্তিরই সম্মেলনে আমরা অর্জন
করতে পারি শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা। যজ্ঞে
বিভিন্ন পদার্থের দহন ঐ বস্তুর অন্তর্নিহিত সঞ্চিত শক্তির
উন্মোচন ও পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়ার একটি উৎকৃষ্ট
প্রক্রিয়া। অন্যদিকে যজ্ঞে উচ্চারিত মন্ত্রের কম্পাঙ্ক
শক্তি বহন করে এক আধ্যাত্মিক প্রেরণা।
যজ্ঞে সমিধ হিসেবে যেসব দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তার
মধ্যে থাকে নানা সুগন্ধি পদার্থ, ওষধি বৃক্ষের কাঠ, পুষ্টিকর
খাদ্য ইত্যাদি। আপনাদের মনে হতে পারে এসব দ্রব্য
পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, বিষাক্ত
কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড প্রভৃতি উৎপন্ন
হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বৈদিক কল্প ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের
বিধি মোতাবেক সঠিক অনুপাতে জ্বালানী, দাহ্য পদার্থ
ব্যবহার করেন এবং যজ্ঞকুণ্ড যদি শাস্ত্রীয় রীতি অনুসারে
তৈরী করেন তবে কোনো বিষাক্ত গ্যাসই উৎপন্ন হবে
না।
যে কার্বন ডাই অক্সাইড যজ্ঞকুণ্ডে উৎপন্ন হবে তা
যজ্ঞকুণ্ডের প্রবল উত্তাপে বাষ্পের সঙ্গে ক্রিয়া করে
ফরমালডিহাইড উৎপন্ন করবে যা যজ্ঞকুণ্ডের চারপাশের
পরিবেশ সুগন্ধে পূর্ণ করে তুলবে। আর এই গ্যাস কেবল
সুগন্ধিই নয়, বায়ুতে থাকা বিভিন্ন কীটাণু দমনেও গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ যজ্ঞের মাধ্যমে আপনি পাবেন দুর্গন্ধ
মুক্ত স্বাস্থ্যকর এক পরিবেশ।
আর যে অল্প পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে যাবে
সেটি সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে বিলীন
হয়ে যাবে। যা একই সাথে বৃক্ষরাজির খাদ্য ও পরিবেশে
মুক্ত অক্সিজেনের যোগান দেবে। তাই যজ্ঞ কেবল
যজ্ঞকারীর নয়, বরং সমগ্র পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য
আশীর্বাদ স্বরূপ।
অনেকে বলতে পারেন যজ্ঞে ব্যবহৃত কাঠের জন্য
তো প্রচুর বৃক্ষ নিধন করতে হবে। আপনাদের জন্য বলছি
বৈদিক ঋষিগণ কেবল মৃত বৃক্ষের কর্তনেরই নির্দেশ
দিয়েছেন। আর সেই সাথে মনু আদি মহর্ষিরা ব্যাপকভাবে
বৃক্ষরোপনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যজ্ঞের জন্য
কোনো জীবিত বৃক্ষ কর্তনের প্রয়োজন নেই, বরং
মৃত বা মৃতপ্রায় বৃক্ষের কাঠই যজ্ঞে সমিধারূপে ব্যবহৃত
হবে।
বর্তমান পরিবেশ দূষণ ও রোগ মহামারীর যুগে যজ্ঞের
আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড. হাফকিন বলেছেন, “ঘি এবং
চিনি মিশ্রণ করে যজ্ঞে পোড়ালে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয়
তা বিভিন্ন রোগজীবাণু ধ্বংস করে।” প্রফেসর টিলওয়ার্ড
বলেন, “চিনি মিশ্রিত হবিষ্যের পরিবেশ শোধনের শক্তি
রয়েছে। এটি যক্ষ্মা, মিলস, বসন্ত প্রভৃতি জীবাণুনাশক।”
গায়ত্রী পরিবার আয়োজিত গোরখপুরে অশ্বমেধ যজ্ঞ
চলাকালীন সময়ে “উত্তর প্রদেশ দূষণ রক্ষা বোর্ড” এর
ডিরেক্টর ড. মনোজ গর্গ একদল বিজ্ঞানী নিয়ে
বেশকিছু পরীক্ষা চালান। এই পরীক্ষার ফল “অখণ্ড
জ্যোতি” সাময়ীকির সেপ্টেম্বর ’৯৭ সংখ্যাতে প্রকাশ
পায়।
যা যজ্ঞের ব্যাপক উপযোগিতা ফুটিয়ে তুলে। বিজ্ঞানীরা
দেখতে পান যজ্ঞ সম্পাদনের পূর্বে সে স্থানে বিষাক্ত
সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ ছিল
যথাক্রমে ৩.৩৬ ও ১.১৬ ইউনিট এবং যজ্ঞ সম্পাদনের
শেষে বিষাক্ত গ্যাস দুটির পরিমাণ কমে দাড়ায় যথাক্রমে ০.৮০
ও ১.০২ ইউনিট।
বিজ্ঞানীর দল যজ্ঞকুণ্ডের কিছু দূরে অবস্থিত জলাশয়ের
পানি পরীক্ষা করেও অভূতপূর্ব ফল লাভ করেন। তাঁরা
দেখতে পান সংগৃহীত নমুনায় যজ্ঞের পূর্বে ব্যাকটেরিয়া
ছিল ৪৫০০ এবং যজ্ঞের শেষে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে
দাড়ায় ১২৫০।
যজ্ঞাবশিষ্ট যে ছাই ছিল তাতে মিনারেল পদার্থের পরিমাণ
পরীক্ষা করে উত্তর প্রদেশ কৃষির ডেপুটি ডিরেক্টর
একে উত্তর মৃত্তিকা উর্বরকারক বলে মত দেন।
১৯৯৩-১৯৯৫ পর্যন্ত ২৭টি যজ্ঞভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়,
যার প্রত্যেকটিই বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে যজ্ঞের
উপযোগিতা ব্যাপকহারে সমর্থন করে।
আপনারা অনেকেই ভূপাল ট্র্যাজেডির কথা শুনেছেন,
যেখানে বিষাক্ত এমআইসি গ্যাস নির্গমনের ফলে শতশত
মানুষ মারা যায় এবং সহস্র মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত
হয়। এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল মাইলের পর মাইল।
৪মে ১৯৮৫ এর দৈনিক “দ্যা হিন্দি” এর একটি প্রতিবেদন
সকলকে বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। প্রতিবেদনের
শিরোনাম ছিল “দূষণ প্রতিরোধে বৈদিক উপায়।” যেখানে বলা
হয় ওই গ্যাস প্ল্যান্টের খুব নিকটবর্তী সোহান লাল খুশওয়া
এর পরিবারের কোনো সদস্যই ওই ঘটনার ফলে মৃত্যু
তো দূরে থাক অসুস্থই হয় নি। কারণ কি? অগ্নিহোত্র। হ্যাঁ
একমাত্র এই পরিবারটিই সেখানে নিয়মিত বৈদিক অগ্নিহোত্র
যজ্ঞ করত। যার ফল স্বরূপ এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবল থেকে
রক্ষা পায় পরিবারটি। আর এই ঘটনা পরিবেশ দূষণ রোধে
অগ্নিহোত্র যজ্ঞের কার্যকারিতা পুনরায় প্রতিপাদন করল।
তাই তো বৈদিক ধর্ম ঘোষণা দিয়েছে “য়জ্ঞো বৈ
শ্রেষ্ঠতম কর্মম্”।
ভগবানও বলেছেন যজ্ঞের মাধ্যমে মনীষিরা কেবল
নিজের চিত্ত শুদ্ধিই ঘটায় না, সেই সাথে ভূত অর্থাৎ
পরিবেশের শুদ্ধতাও বজায় রাখে। আর কলির এ দুঃসময়ে
আমরা যজ্ঞবিমুখী হয়ে কেবল অন্ধকারেই ঘুরে
বেড়াচ্ছি। তাই আমাদের উচিত পুনরায় অগ্নিহোত্র আদি যজ্ঞ
আয়োজনের মাধ্যমে সনাতনের স্বর্ণযুগে ফিরে যাওয়া।
যেদিন ঘরে ঘরে সুবাসিত অগ্নিহোত্রের গন্ধ ছেয়ে
যাবে এবং মুখে মুখে গায়ত্রীর পবিত্র ধ্বনি উচ্চারিত হবে
সেদিনই কলি হবে পরাহত এবং ফিরে আসবে সনাতনের
স্বর্ণযুগ।
সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭
যজ্ঞ কেনো করা হয়?
বেদ কি ঈশ্বরের বানী?
প্রথমেই নিরুক্তের একটি মন্ত্র দেখ নিই---
ঋষয়ো মন্ত্রদ্রষ্টারঃ।
ঋষির্দর্শনাৎ স্তোমান্
দদর্শেত্যৌপমন্যয়বঃ।
(নিরুক্ত সংহিতা ২।১১)
=> এখানে স্পষ্ট ঋষিদের মন্ত্রদ্রষ্টা বলা হয়েছে , স্রষ্টা
নয় ! দ্রষ্টা অর্থে যিনি দৃষ্ট করেছেন । এখানে দৃষ্ট
অর্থে উপলব্ধি করা ! তাহলে স্রষ্টা কে ?
-> অবশ্যই ঈশ্বর ! কেননা বেদ স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় বেদ
ঈশ্বর হতে উৎপন্ন হয়েছে।
অনেকে বলেন , ঈশ্বর ঋষিদের মধ্যে জ্ঞান প্রদান
করেছিলেন । সেই জ্ঞান দিয়ে ঋষিগণ নিজের ভাষায়
নিজের মত মন্ত্র রচনা করে নিয়েছেন । জ্ঞান যেহেতু
ঈশ্বরের , তাই বেদও ঈশ্বরের সৃষ্টি বলা হয়।
এখানে বেদ* অর্থে যদি বেদের মন্ত্রসকল না হয়ে শুধু
বেদজ্ঞান* হয় , তাহলে অর্থ দাড়ায় - "বেদজ্ঞান ঈশ্বর
সৃষ্টি করেছেন !" তবে আমি প্রশ্ন করি , বেদজ্ঞান* সদা
নিত্য হলে তার সৃষ্টি কিভাবে সম্ভব ? নিত্য জিনিসের সৃষ্টি
ধ্বংস থাকতে পারে না।
অতএব , প্রতিপন্ন হয় যে , বেদ ঈশ্বরের সৃষ্টি* একথা
বললে এটাই বুঝতে হবে - বেদ জ্ঞান সমৃদ্ধ মন্ত্রসকল ই
ঈশ্বরের সৃষ্টি !
★ঈশ্বর তো নিরাকার(যদিও বা ঈশ্বরের সাকার রুপ আছে) ! তবে তার হতে শব্দরূপ বেদ কি
প্রকারে উৎপন্ন হতে পারে ?
=> ভাবিয়া দেখো তো , এমন প্রশ্ন করলে ঈশ্বরের
ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে কিনা ? পরমেশ্বর
সর্বশক্তিমান এটা ভুলিলে চলবে না । নিরাকার নির্গুন(সগুনও হতে পারেন)
ঈশ্বর যদি
জগৎ সৃষ্টি করতে পারেন , তবে বেদের বেলায় এ শঙ্কা
কেন ?
আমরা মানসিক কোন বিষয় বিচার করিবার সময় মনে মনে বাক্যাদি
সাধন ব্যতিরেকে প্রশ্নোত্তরাদিও শব্দোচ্চরনে সমর্থ
হই । পরমেশ্বরের বিষয়েও এরূপ জ্ঞাত হওয়া কর্তব্য !
এইরূপেই ঈশ্বর অন্তরে কারনরূপ* শব্দে বেদ প্রদান
করেছেন । বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত বুঝানোর চেষ্টা করি
-
মহামুনি পাণিণি , পতজ্ঞলি ,জৈমিনি সকলেই স্বীকার করেন শব্দ
নিত্য । আমরা একটি শব্দ শুনিলে , সেই উচ্চারিত শব্দ
জ্ঞানমধ্যে স্থির থাকে । পুণরায় একই শব্দ উচ্চারন করলে
তা জ্ঞানমধ্যে স্থিত শব্দের অর্থপ্রকাশ করা হয় মাত্র যে
ইহা সেই !! তাই উচ্চারণ ক্রিয়ার সাথে সাথে শব্দের শব্দের
সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যায় না ! অতএব শব্দের নিত্যরূপ সর্বদা নিত্য
থাকে , কার্যরূপ ধ্বংস হয় মাত্র ! উচ্চারণ ক্রিয়া না করলেও শব্দ
বর্তমান থাকে !
এবং এই নিত্য শব্দে বেদ মন্ত্র সকল ও নিত্য থাকে !
পূর্বে বলেছি মনে মনে প্রশ্নোত্তরাদি
শব্দোচ্চরনের কথা ।-
আমরা জানি , কারণ ব্যতীত কার্য হয় না । এবং কার্য কারণ
ব্যতীত হয় না ! সৃষ্ট মন্ত্ররূপ* কার্যের পিছনে সেই সৃষ্ট
মন্ত্ররূপ* কার্যের কারণ থাকা আবশ্যক ! অতএব,
কারণশব্দরূপে* বেদ মন্ত্র না থাকিলে কার্যশব্দরুপ* বেদ
কোথা দিয়ে আসবে ? সমাধিস্ত ধ্যনস্থ ব্যক্তি সরাসরি
ব্রহ্মে লিন হন ! তখন তার অন্তঃকরনে কারণশব্দরূপে* যে
মন্ত্রোচ্চারিত হয় তা সরাসরি ঈশ্বরেরই সৃষ্টি ! এবং তার
কার্যরূপ* হল উচ্চারিত মন্ত্র ! -তাছাড়া , এই কারণশব্দ
অন্তঃকরণে উচ্চারিত না হইলে জ্ঞানই বা কিকরে উপলব্ধের
অনুকূলে আসবে !
জ্ঞাণেন্দ্রিয় দ্বারা শ্রুত হইয়া যাহা গৃহীত হয় এবং বাগেন্দ্রিয়
দ্বারা উচ্চারণে যাহা প্রকাশিত হইয়া থাকে ও যাহার নিবাসস্থল
আকাশ - তাহাকেই শব্দ বলে।
> বেদ বিষয় ক্ষেত্রে যাহাই কারণ* তাহাই কার্য* হওয়া
আবশ্যক ।কেননা , ঈশ্বর যতটুকু জ্ঞান প্রদান করেন,
ঋষিদের শুধুমাত্র ততটুকুই বলার সামর্থ্য থাকতে পারে, তদ্
অতিরিক্ত বলার সামর্থ্য থাকতে পারে না ।এবার, কারণরূপ*
মন্ত্রসকল ঈশ্বর সৃষ্ট হলে , কার্যরূপ মন্ত্রসকল ও
ঈশ্বরের সৃষ্টি বলতে হবে ! ঋষি ওখানে প্রকাশের মাধ্যম
মাত্র !
* বেদ নিত্য - তা সর্বকালের জন্যই একই ! কিকরে?
=> কারন (ঋ১০/১৯০/৩) প্রতিকল্পে সৃষ্টি একই ! একই সৃষ্টির
জন্য একই জ্ঞান প্রয়োজন। জল তেষ্টা পেলে কারো
নিকট " আমাকে একটু জল দাও" বলিব ! পুনরায় জল তেস্টা
পেলেও সেই " আমাকে একটু জল দাও" বলিব । " আমাকে
একটু দুধ দাও" বলিব না ! অতএব , সৃষ্টি যদি সকল কল্পে একই
হয় ,বেদ মন্ত্রসকল ও একই হওয়া আবশ্যক।
সুতরাং , বেদ জ্ঞান সহ সকল মন্ত্রই ঈশ্বর প্রদত্ত । এজন্য
একমাত্র বেদকেই অপৌরষেয় বলা হয় ! ঈশ্বরের বানী
বলেই তা অভ্রান্তরূপে মানা হয়।
মনুসংহিতায় যু্দ্ধে জয়ের পর লুটপাট করা নিয়ে দাবির খন্ডন
বেদের নিয়মের কারনে মনুসংহিতাতেও সব কিছু দখল
করতে বলা হয়েছে -
“গাড়ি, ঘোড়া, হাতি, অর্থ, শস্য , গবাদিপশু ও
নারী তার দখলে যে যুদ্ধের মাধ্যমে তা জয় করে।”(মনু
৭।৯৬)
অর্থাৎ শত্রু পরিবারের নারীরাও যাবে দখলকারীর
ভোগের জন্য।
.
যৌক্তিকতা বিচারঃ
মনুসংহিতার ৭ম অধ্যায়টি হলো রাজধর্ম বিষয়ক, রাজার আচরন ও
বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত এখানে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ৷
অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কতকগুলো হলো
মদ্যপান, পাশাখেলা বা জুয়াখেলা, স্ত্রীসম্ভোগ, মৃগয়া বা
অকারন পশুহত্যা, পরধনঅপহরন, অকারনে দন্ডদান ও কঠোর
বাক্য প্রয়োগ এইগুলির থেকে দূরে থাকতে রাজাকে
উপদেশ করা হয়েছে (মনু ৭/৫২) ৷
এবং মনু ৭।৫০ এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মদ্যপান,
পাশক্রীড়া, স্ত্রীসম্ভোগ, পশুমারন এ চারটি অতিশয়
দুঃখহেতু। অর্থাৎ মনু মহারাজ কোন পরস্ত্রীকে ভোগ
অথবা পরের সম্পদকে দখল করাকে সমর্থন করে নি বরং
দুঃখদায়ক বলেছেন। একজন ক্ষত্রিয় রাজা হিসেবে বিভিন্ন
সময় যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেই হয় সেই যুদ্ধে
অনেকসময় ধনাদি লাভ হয়, শত্রুপক্ষের নিরীহ স্ত্রীও
হস্তগত হয় ৷ এখানে সেটাই বলা হয়েছে ৷ সেই অসহায়
স্ত্রীর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও তাকেই নিতে হবে ৷
ধনসম্পদ রাজাকে হস্তান্তরিত করতে হবে যাতে সেগুলো
রাজকার্যে ব্যায়িত হতে পারে (মনু ৭/৯৭) ৷ এবং রাজা নিরীহ
নরনারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন ৷ কারন
যুদ্ধসজ্জাবিহীন বা অস্ত্রধারী লোকেদের হত্যা করা
যাবে না (মনু ৭/৯২)। অর্থাৎ পরাজীতনারী ও পুরুষের
নিরাপত্তা ও তাদের স্বাভাবিক জীবনের দায়িত্ব রাজাকেই
নিতে হবে ৷ যেমনটা রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের পর পরাজিত
লঙ্কা রাজ্যের সকল নরনারীদের নিরাপত্তা প্রদান
করেছিলেন।
বেদে কি অশ্লীলতা রয়েছে?
আজকাল বেদ বিষয়ে আমাদের সামনে অনেক বিচিত্র তথ্য
আসে। বেদের মধ্যে বিভিন্ন শব্দ যেমনঃ
ইন্দ্র,মহাবীর,রাম, কৃষ্ণ ইত্যাদি আদি কল্পনা স্বর্গের রাজা
ইন্দ্র, জৈন ধর্মের মহাবীর,আর্য রাজা শ্রীরাম,কৃষ্ণ ইত্যাদি।
যাহার দ্বারা প্রতীত হয় যে, বেদের মধ্যে ইতিহাস
রয়েছে। পশ্চিম বিদ্বানরা বেদ মধ্যে আর্য দ্রবিড়ের
যুদ্ধের বর্ণনা খুজে বের করেছেন।যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন
মতাবলম্বীরা তাদের নিজ নিজ মতের জনক কে বেদের
মধ্যে প্রদর্শনের প্রয়াস করে।
শুধু তাই নয় পুরাণে বর্ণিত বিভিন্ন অশ্লিল ভাষ্য বেদের
মধ্যে বিভিন্ন পন্ডিত খুজে পেয়েছেন। যেমনঃ
প্রজাপতির দুহিতার (কণ্যার) সাথে সমন্ধ্য, ইন্দ্র অহল্লার অবৈধ
সমন্ধ ইত্যাদি। যার ফলে বেদ বিদ্বেষীরা আজ বেদ কে
অবমাননা করার সুযোগ পায়। এক্ষনে আমরা বেদ মধ্যে
হতে কিছু অশ্লিতা দাবী সমীক্ষা করে দেখবো -
.
(i) ঋগবেদ ১।৬৪। ৩৩ এ প্রজাপতি তার দুহিতার (পুত্রীর)
মধ্যে গর্ভ উৎপাদন করেন।
এই মন্ত্রের অশ্লিলতা দেখে অনেকে বেদে পিতা
কণ্যার অনৈতিক সমন্ধ দেখানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে।
.
মন্ত্রটিতে মূলত অলংকারিক বর্ণনা এসেছে। এখানে
প্রজাপতি হচ্ছে সূর্য [ প্রজাপতি বৈ সুপর্নো গুরত্বানেষ
সবিতা, শতঃ ১।২।২।৪]। তার দুটি কণ্যা ১ম প্রকাশ ২য় ঊষা। যে
দ্রব্য যাহা হইতে উৎপন্ন হয় বলে তাকে উক্ত দ্রব্যের
সন্তান বলা হয়। ঊষা যা রাত্রির তিন বা চারঘটিকায় পূর্ব দিশায়
রক্তবর্ণ দৃষ্টিগোচর হয় তা সূর্যের কীরণ হতে উৎপন্ন
বলে তাকে কণ্যা হয়। ঊষার সম্মুখে সূর্যের যে কিরণ
পতিত হয় তাহাতে বীর্য স্থাপন রূপ কার্য হয়ে থাকে। এই
দুইয়ের সংযোগ দ্বারা পুত্র অর্থাৎ দিবস উৎপন্ন হয়।
নিরুক্ত ৪।২১ এ বলা আছে, "তত্র পিতা দুহিতু গর্ভং দধাতি পর্জন্য
পৃথিব্যা "। অর্থাৎ পিতার যে পর্জন্য অর্থাৎ জলরূপী যে
মেঘ তাহার কণ্যা ভাব পৃথিবী হয়ে থাকে। ঐ মেঘ যখন
পৃথিবীরূপ কণ্যাতে বৃদ্ধি দ্বারা জলরূপী বীর্য ধারন করে।
তখন ঐ পৃথিবী গর্ভবতী হইয়া কিছুকাল থাকিয়া পরে ঔষধাদি
রূপ অনেক পূত্র উৎপন্ন করে।
.
(ii) ইন্দ্র ও অহল্যা বিষয়ে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে
সেটি হলো - ইন্দ্র গৌতম ঋষির স্ত্রীর সহিত ব্যাভিচারে
প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। যা গৌতম ঋষি জানার পর অহল্যাকে পাষাণ
হওয়ার অভিশাপ প্রদান করেন এবং ইন্দ্রকে সহস্র
যোনীযুক্ত শরীর হওয়ার অভিশাপ দেন।
.
" ইন্দ্রাগচ্ছেতি। গৌরবস্কন্দিন্নহল্যায়ৈ জারেতি (শতপথ ৩।৩।৪।
১৮)" এখানে ইন্দ্র শব্দে সূর্য বুঝায় এবং রাত্রীকে অহল্যা
বলা যায় তথা গৌতম চন্দ্র সদৃশ। এস্থলে রুপকালঙ্কার মতে
রাত্রীকে চন্দ্রমার স্ত্রী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
চন্দ্রমা নিজ স্ত্রীর সহিত রাত্রীকালে সকল প্রাণীর
আনন্দদায়ক হযে থাকে। ইন্দ্র তথা সূর্যের আগমনেই
চন্দ্রমার সহিত রাত্রীর শৃঙ্গার ভঙ্গ বা নষ্ট করে দেয়।
চন্দ্রমাকে গৌতম এজন্য বলা যায় যে উক্ত চন্দ্রমা অত্যন্ত
বেগশালী। এবং রাত্রীকে অহল্যা এই কারনে বলা হয় যে
রাত্রীতে দিবসের লয় হয়। পুনরায় সূর্যই রাত্রীর
নিবৃত্তকারী এইজন্য সূর্যকে রাত্রীর জার বলে "
আদিত্যোত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা (নিরুক্ত ৩।১৬)।
এইরূপ চমৎকার রূপকালঙ্কার কে অল্পবুদ্ধি ব্যক্তি অনর্থ
প্রকাশ করে অশ্লিতার সৃষ্টি করেছে।
.
(iii) কশ্যপ ঋষি সমন্ধ্যে একটি ভ্রম এই যে - মরীচির পুত্র
কশ্যপ কে দক্ষ প্রজাপতি তাহার ১৩ টি কণ্যা বিবাহ বিধানে
অর্পন করেন। যাহার দ্বারা সমগ্র জগতের সৃষ্টি হলো।
অর্থাৎ দিতি হতে দৈত্য, অদিতি হতে আদিত্য, দনু হতে দানব
কদ্রু হইতে সর্প ও বিনতা হতে পক্ষী তথা অনান্য জন হতে
বানর, তৃণ আদি উৎপন্ন হয়েছে।
.
এগুলো তো বিজ্ঞান বিরুদ্ধ বটেই সঙ্গে অসম্ভবও।
একমাত্র ঈশ্বর হতেই সমস্ত কিছু উৎপন্ন হতে পারে।
এজন্য পরমেশ্বরকে কূর্ম বলা হয় "স য়ৎ কূর্ম নাম, (শতপথ
৭।৫।১।৫)। এইরুপে পরমাত্মা নিজ জ্ঞাননেত্র দ্বারা সমস্ত
কিছু দর্শন করে বলে তাহাকে কশ্যপ বলে। " কশ্যপো বৈ
কূর্ম্মস্তস্মাদাহুঃ সর্বাঃ প্রজাঃ কাশ্যপ্য ইতি (শতপথ ৭।৫।১।৫)।
এই কশ্যপ শব্দে পানিনীকৃত অষ্টাধ্যায়ী ব্যকরনের সূত্র
মতে অাদ্যান্তক্ষরের বিপর্যয় ঘটিয়া থাকে অর্থাৎ শেষাক্ষর
প্রথমে এবং প্রথমাক্ষর শেষে চলে যায় । এ জন্য পশ্যকঃ
এই শব্দের আদ্যান্তের বিপর্যয় ঘটিয়া পশ্যক স্থানে কশ্যপ
হয়ে গেলো। এজন্য পরমাত্মাকে কশ্যপ বলা যায়।
.
(iv) যজুর্বেদ ১৩।২০ এ অশ্বমেধ যজ্ঞ নিয়ে একটা ভ্রান্তি
যে, যজমানের স্ত্রী ঘোড়ার বীর্য নিজ গর্ভে ধারন
করবে।
.
মন্ত্রটিতে "বাজী " শব্দটিকে অনেকে ঘোড়া অর্থে
ব্যবহার করে এরকম অনর্থ করেছে। ঐতেরীয় ৩।১৮ এ
বাজী অর্থে বলা হয়েছে "ইন্দ্র বৈ বাজী"। এখানে
ইন্দ্র পরমঐশ্বর্যযুক্ত রাজা। অশ্বমেধ যজ্ঞ সমন্ধে
শতপথ ১৩।২।২।১৬ রয়েছে - " রাষ্ট্রমশ্বমেধো
জ্যোতিরেব তদ্রাষ্ট্রে দধাতি " রাষ্ট্রমশ্বমেধ শব্দের
অর্থ হলো যার দ্বারা রাজ্যের প্রকাশ বা উন্নতি ঘটে।
এভাবে রাষ্ট্রে প্রজা এবং রাজা মিলে চতুরপদ অর্থাৎ ধর্ম
অর্থ কাম মোক্ষ সিদ্ধির প্রচার করনে সদা প্রবৃত্ত থাকবে।
এবং ঐশ্বর্যবান রাজা বীর্য- পরাক্রম ধারন করে রাষ্ট্রকে
পরাক্রম প্রদান করবে।
.
(v) মিত্র বরুণ এবং উর্বশী দ্বারা বসিষ্টের উৎপত্তির কথা
ঋগবেদ ৭।৩৩।১৭ এ প্রচলিত আছে যে, মিত্র বরুণ
উর্বশী অপ্সরা কে দেখে বীর্য স্খলিত হয়ে যায়। এবং
সেই বীর্য থেকে ঋষি বসিষ্ট উৎপন্ন হন।
.
বেদের এরুপ অশ্লিল অর্থ কারীর বুদ্ধি নিশ্চয়রূপে ভ্রষ্ট
হয়েছে। মিত্র এবং বরুণ হচ্ছে বর্ষার অধিপতি "মিত্রাবরুণ
বৃষ্টাধিপতি অঃ ১।২৪।৫। এবং উর্বশী হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং বসিষ্ট
হচ্ছে বৃষ্টির জল। অর্থাৎ আকাশে যখন শীতল এবং উষ্ণ
বায়ু প্রবাহিত হয় এবং বিদ্যুৎ চমকে। তখন অধিকতর বৃষ্টি
উৎপন্ন হয়।
.
এরূপ অলংকারীক বর্ণনাকে ভূল অর্থ করে বেদকে
কলুষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে কিছু মুর্খ লোক। কিন্তু
বেদ জ্ঞান অত্যন্ত নির্মল এবং পবিত্র। বেদের সকল শব্দ
ধাতু থেকে তৈরী অর্থাৎ বেদের শব্দ যৌগিক এবং
যোগারুঢ। ধাতুর যতগুলো অর্থ হয় ততগুলো অর্থ ঐ সকল
শব্দের হয়ে যায়। রুঢি শব্দ বেদে নেই, এজন্য বেদে
বিবিধ বিদ্যার বর্ণনা রয়েছে। তাই আসুন বেদের গভীর
অর্থ বোঝার প্রয়াস করি এবং নিজের তথা অপরের কল্যাণ
করি।
বেদে অশ্লীলতা প্রসঙ্গে অপপ্রচারের জবাব
আজকাল অনলাইনে কিছু তমোনিষ্ঠ পাপবুদ্ধিদের আধিক্য
বৃদ্ধি পেয়েছে। বেদের মহত্ততার হানি ঘটানোর জন্য
এদের প্রচেষ্টা। যদিও বেদের মতো উচ্চ আধ্যাত্মিক
জ্ঞান এসব পাপ বুদ্ধিদের মস্তিষ্কে নেই। যার ফলে এরা
নিজেদের অশ্লিলপূর্ণ জীবনের নোংরা জ্ঞান দিয়ে
বেদ বিচার করতে আরম্ভ করেছে।যার দরুন এরা শুধু
নিজেদেরই নয় নিজেদের জন্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ
করেছে। এসব কুলাঙ্গার বেদ মন্ত্রে কিছু অশ্লিলতা দাবী
করেছে।
আসুন সেগুলোর খন্ডন এবং পর্যবেক্ষন করা যাক-
.
=>> দাবি - ০১
ভগবান বাপ আর কণ্যার যৌন সঙ্গমের ফলে মনুষ্য তৈরী
করেছিলো।
(ঋগবেদঃ ১০।৬১।৫-৭)
.
দাবির সত্যতাঃ
এদের যে জন্মগত বড় একটা ক্রুটি আছে সেটা একদম
স্পষ্ট। সেজন্যই কিছু কুলাঙ্গারদের ভাষ্য যেমন
রামগোবিন্দ, রমেশ, মহিধর এদের ভাষ্য দিয়ে বেদকে
অশ্লিলতা দাবী করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। বেদ মন্ত্রার্থ
বুঝতে হলে প্রাচীন গ্রন্থ সমূহ যেমনঃ নিঘন্টু, নিরুক্ত,
পাণিনীর ব্যকরনের মতো শাস্ত্র এবং ব্যাখ্যার জন্য ব্রাহ্মণ
গ্রন্থের প্রয়োজন হয়। তবেই মন্ত্রের যথার্থ ভাবার্থ
খুজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু রমেশ বা রামগোবিন্দের ভাষ্য
এসব গ্রন্থের ধারে কাছ দিয়েও যায় না। আর সেই কারনেই
এদের ভাষ্য অশ্লিলতাই পরিপূর্ণ।
আসুন এবার মন্ত্রগুলোর যথার্থ অনুবাদ দেখে নেওয়া
যাক। তাহলেই স্পষ্ট হবে কি বলা আছে এই
মন্ত্রগুলোতে।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৫
পদার্থঃ (যস্য বীর কর্মম প্রথিষ্ট) যেই গৃহস্থের
পূত্রকর্ম - পূত্রোৎপাদনার্থ কর্ম বীর্যসেচন প্রথিত -পুষ্ট
হয় (ইষ্ণত- অনুষ্ঠিতম) পূত্ররূপ দ্বারা প্রাপ্ত সফলীভূত (পুনঃ
তত অবৃহতি) পূনরায় তাহাকে এই উত্তমভাবে উৎসাহিত করি
পূত্রোৎপাদন দ্বারা (নু নর্য অপৌহত) নরের অবশ্যই হিতকর
হয়ে সর্ব কার্যভার কে ত্যাগ করবে। (যত) যা দ্বারা (কণায়াঃ
দুহিতু- অনুভূতম্ - আস্) সন্তান দোহন যোগ্য- উৎপাদন
যোগ্য কান্তার অনুকুলতার মধ্যে ধারন করে (অর্ণবা) নিজ
মধ্যে সমর্থ স্বাশ্রয়বান হয়ে যায়।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৬
পদার্থঃ (যত্ যুবাত্যাং কর্ত্বম-অভবত্) যখন যুবতী ভার্যা মধ্যে
পুত্রোৎপাদন দ্বারা কর্তব্য পূর্ণ হয়ে যায় (পিতরি কামং কৃণ্বান -
অভীকে) জীবিত পিতা - তার আশ্রয় পুত্রের পুত্র উৎপাদন
কে কামনা হয়ে যাবার পর তার সম্মুখ (বিয়ন্তৌ মনানক- রেত
জহতুঃ) বিশিষ্ট দ্বারা প্রাপ্ত হয়ে পতি পত্নি অল্প সন্তান কে
ত্যাগ করে- উৎপন্ন করে (সুকৃতস্য যোনৌ সানৌ নিষ্কত্তম্)
পূর্ণকর্মের অর্থাৎ পিতৃঋণের প্রতিকার হয়ে যাবার পর
গৃহাশ্রমের মধ্যে বিশেষ সেচন করার যোগ্য জগতের
মধ্যে নিষেক করা কর্তব্য।
.
★ ঋগবেদ ১০।৬১।৭
পদার্থঃ (ক্ষ্ময়া সঞ্জগ্মানঃ) সন্তানের ভূমিরূপ পত্নিদ্বারা সঙ্গত
হয়ে,তথা ( রেত নিষিঞ্চন) গর্ভাধান রীতি দ্বারা বীর্য
সিঞ্চন করে (পিতা স্বাং দুহিতরম-অধিষ্কন্) পিতা নিজ কণ্যা কে
প্রাপ্ত করে -উৎপন্ন করে - পুত্র প্রাপ্ত করে না। তখন
(সবাধ্য -দেবাঃ ব্রহ্ম জনয়ন) দুরদর্শী বিদ্বান জ্ঞান কে -
গৃহস্থ জ্ঞান কে নিয়ম কে প্রকট করে ঘোষিত করে
(বাস্তোষ্পার্তি ব্রতপাং নির অতক্ষন) সেই কণ্যাকে গৃহপতি
ঘরের স্বামীরূপ পিতৃকর্মের রক্ষিকা নির্ধারিত করে।
[ অনুবাদঃ স্বামী ব্রহ্মমুনিঃ পরিব্রাজক বিদ্যামার্তন্ড]
.
উক্ত তিনটি মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে, পুরুষ যুবতী ভার্যা
মধ্যে পূত্রোৎপাদনের জন্য বীর্য নিষেক অবশ্য
করবে। এজন্য গৃহস্থ আশ্রম সবচেয়ে পূণ্য স্থান এবং ইহা
গৃহাশ্রমের পরম্পরা। যদি পুরুষ বীর্য সিঞ্চনে করার পর পূত্র
না প্রাপ্ত করে কেবল কণ্যা কে প্রাপ্ত করে। তবে সে
কণ্যা পিতৃকর্মের রক্ষিতা তথা পিতার সম্পত্তির স্বামী হবে।
ইহাই বেদের পরম্পরা এবং বৈদিক সিদ্ধান্তের মান্যতা।
কত নির্মল বেদের এই সিদ্ধান্ত। অথচ এসব পাপবুদ্ধিরা এসব
মন্ত্রে পিতা কণ্যার অজাচার খুজে পেয়েছে।
=>> দাবী - ০২
"হে পুরুষ! তোমার পুরুষাঙ্গ বড়ো আর দীর্ঘ না হলে তুমি
বাপ হতে পারবে না"
(অথর্ববেদ ২০।১২৬।১৭)
.
দাবীর সত্যতাঃ
সর্বপ্রথম মন্ত্রের যথার্থ অনুবাদ পদার্থসহ দেখে নেওয়া
যাক -
.
ন সেশে যস্য রোমশং নিষেদুষো বিজৃম্ভতে।
সদীশে যস্য রম্বতেন্তরা সকথ্যা কপৃদ বিশ্বস্মাদিন্দ্র।।
(অথর্বববেদ ১০।১২৬।১৭)
.
পদার্থঃ (সঃ) সেই মনুষ্য (ন ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় না ( যস্য
নিষেদুষঃ) যে বসে থাকে [অলস] (রোমশম) কেশযুক্ত
মস্তকে (বিজুম্ভতে) হাই তোলে (সঃ ইত) সেই পুরুষ
(ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় (যস্য) যার (কপৃত) শির পালনকারী
কপাল (সকথ্যা অন্তরা) দুই জঙ্ঘার মাঝে [ চিন্তনে]
(রম্বতে) ঝুকে থাকে (ইন্দ্র) ইন্দ্র (বিশ্বস্মাত্) সবার
থেকে (উত্তর) উত্তম।
[ অনুবাদঃ ক্ষেমকরনদাস ত্রিবেদী]
.
উপরিউক্ত মন্ত্রে না আছে পুরুষাঙ্গের কথা না আছে সেটা
বড় বা দীর্ঘ করার কথা।
উক্ত মন্ত্রে "ঈশ" শব্দটি এসেছে যার অর্থ ঐশ্বর্য। এবং
একজন ব্যক্তির ঐশ্বর্য তখনই বৃদ্ধি পাবে যখন সে কর্মঠ
এবং কর্ম চিন্তনে রত থাকবে। অলস ভাবে বসে থাকলে তার
কখনও ঐশ্বর্য প্রাপ্তি ঘটবে না। ইহাই মূলত উক্ত মন্ত্রের
মূল ভাবার্থ।
আর ঈশ্বর্য্য প্রাপ্তির জন্য পুরুষাঙ্গ দীর্ঘ বা বড় হওয়ার
সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটা কাম চাহিদার সাথে
সম্পর্কযুক্ত। যা ওই পাপবুদ্ধির মস্তিস্কে প্রবেশ
করেছে।
.
=>> দাবী - ০৩
অগ্নি নাকি কুমারীদের lover।
Yama, indeed, is what is born, Yama, what shall be
born; he [Agni] is the maidens’ lover, the matrons’ lord.
(Rig Veda 1.66.4)
.
দাবীর সত্যতাঃ
এসব কুলাঙ্গার দের মস্তিষ্কে এরকম জ্ঞান থাকবে এটাই
স্বাভাবিক। আসুন মন্ত্রটির সত্যার্থ দেখে নেওয়া যাক-
.
"হে মনুষ্য! তোমরা যে সেনাপতি নিয়মকারী প্রকাশ
সবকিছুর নিয়মকর্তা জন্মাদি কারণযুক্ত কণ্যাবত্ বর্তমান রাত্রীর
আয়ুর হননকর্তা সূর্যের সমান উৎপন্ন হয়ে প্রজাদের
পালনকর্তা প্রেরিত উত্তম শিক্ষা কে প্রাপ্ত হয়ে বীর
পুরুষের বিজয়কারী সেনার সমান শত্রুদের উপর অস্ত্র
শস্ত্র চালনকারী দীপ্তির প্রতীতিকারী বিজলীর সমান
অপরিপক্ব বিজ্ঞাযুক্ত জনকে ধারন করি "
[ অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
.
এই মন্ত্রে উপমালঙ্কারের প্রয়োগ হয়েছে। মন্ত্রটির
ভাবার্থ এই যে, মনুষ্য বিদ্যা দ্বারা উত্তম শিক্ষা দ্বারা সিদ্ধ
হয়ে শত্রুর উপর বিজয় প্রাপ্ত করবে। যেমন ধনুর্বেদ
সমন্ধ্যে জ্ঞাত বিদ্বান লোক শত্রুদের উপর অস্ত্র শস্ত্র
ছুড়ে তাদের ছেদন করে। এভাবে সেনাপতি সব দুঃখকে
নাশ করবে।
.
অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান হওয়ার দরুন এতে কোন
অশ্লিলতা নেই। তাই এসব অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন।
সংগ্রহ করা---: ব্যাক টু দ্যা বেদ
শৌচকার্য করার পর কি করা উচিত??
✅প্রশ্ন---- হিন্দু ধর্মে শৌচকার্য করার অাগে ও পরে কি কি করতে হবে এই ব্যপারে কোন গাইড লাইন অাছে কি না? _____________________________________...
-
★সনাতন ধর্ম হাজার বছরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা একটি ধর্ম। মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি কাজের ব্যাপক পর্যালোচনার পরই ঋষিগণ একটি করে নিয়ম দিয়ে দিয়েছে...
-
অনলাইনে এখন অত্যন্ত গুরুত্ত্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিমা নাই, কিন্তুু সনাতনীরা প্রতিমা বানিয়ে পূজা করে কেনো? তাদের জন্য নিম্নের...
-
বর্তমানে অনলাইনে কিছু জ্ঞানপাপীর আগমন হয়েছে তারা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অপপ্রচার করে। তাদের অন্যতম নিকৃষ্ট একটি লেখা যেখানে তারা শু...